ঢাকা | শনিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭:২৬ অপরাহ্ণ
ফিচারবিশ্ব মা দিবস

বিশ্ব মা দিবস

spot_img

মা – ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু কি বিশাল তার পরিধি! সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এই শব্দটা শুধু মমতার নয়, ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার৷ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক ‘মা’। ছোট্ট এ শব্দের অতলে লুকানো থাকে গভীর স্নেহ, মমতা আর অকৃত্রিম দরদ।

একটি শিশু জন্মের আগে থেকেই মায়ের সান্নিধ্যে অভ্যস্ত হতে থাকে একটু একটু করে। মায়ের ভেতর বেড়ে ওঠার সময়টা থেকেই সন্তানের যে আত্মিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় মায়ের সঙ্গে, জন্মের পর সেটা ধীরে ধীরে কেবল বাড়তেই থাকে। মা আমাদের অস্তিত্বের এক অপরিহার্য অংশে পরিণত হন।মা এর অনুগ্রহ ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়।

জন্মদাত্রী হিসেবে সকলের জীবনে মায়ের স্থান সবার ওপরে৷ তাই তাঁকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানানোর জন্য একটি বিশেষ দিনের হয়ত কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরও আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার সূত্রপাত ১৯১৪ সালের ৮ই মে থেকে৷

আব্রাহাম লিংকনের একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে- ‘যার মা আছে সে কখনই গরীব নয়।’ অর্থাৎ কেবল মায়ের আশ্রয় থাকলেই বন্ধুর পথের নানা বিপদ পাড়ি দেওয়া যায় সহজেই। প্রাচীন গ্রিসের মাতৃরূপী দেবী সিবেলের আরাধনা, প্রাচীন রোমানে দেবী জুনোর আরাধনা ও ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে মাদারিং সানডের মতো বেশ ক’টি আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম মা দিবসের ধারণা সামনে আসে।

মায়েদের সম্মানে মাদারিং সানডে পালিত হতো নির্দিষ্ট একটি রবিবারে। যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয় আমেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামের এক নারীর হাত ধরে। ১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের  সময় শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এটি মাদার’স ডে প্রোক্লেমেশন নামে পরিচিত ছিল। এ ঘোষণার মধ্যে জুলিয়া রাজনৈতিক স্তরে সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন। এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। এ সময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন।

কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। ১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে হার মানেননি আনা। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে। অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।

কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই বাণ্যিজ্যিক প্রভাবে কমতে থাকে দিনটির মূল আবেদন। যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে ওঠে যে আনা মেরি জার্ভিস প্রতিবাদী হয়ে পড়েন। দিনটির এমন অবমাননার প্রতিবাদে তিনি নিজের সমস্ত সম্পত্তি ব্যয় করেন ও ঘোর বিরোধিতার অভিযোগে গ্রেফতার হন। মূলত আনা মেরি জার্ভিসকেই মা দিবসের আসল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়।

spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর