ঢাকা | সোমবার | ১৭ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ
জাতীয়কি ঘটেছিল এমপি আজীমের সাথে?

কি ঘটেছিল এমপি আজীমের সাথে?

spot_img

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘কলকাতার নিউটাউনে হত্যার শিকার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে মরদেহের অংশ বিশেষ পাওয়া যেতে পারে। আর আমরা ভারতের পুলিশের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছি।’

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘হত্যাকারীরা এমনভাবে মরদেহ গুমের চেষ্টা করেছে যাতে কোনো হদিস না মেলে। মরদেহ গুমের জন্য হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করে পৃথক পৃথক ট্রলিতে করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মরদেহের টুকরো নিয়ে যাওয়ার সময় আটকালে কেউ যাতে বুঝতে না পারে, এজন্য মসলা মিশিয়ে ‘খাবার উপযোগী’ মাংসের মতো করা হয়।’

 এ ঘটনায় তদন্তে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তদন্তে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ মে নিউটাউনের আবাসনেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় আনারকে। খুনের পর টুকরো টুকরো করে কাটা হয় মরদেহ। ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিনদিন ধরে খণ্ডিত অংশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। কিছু অংশ ওই ফ্ল্যাটের ফ্রিজে রাখা হয়। এমনকি ফ্ল্যাট থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, প্লাস্টিক ব্যাগে ভরেই খণ্ডিত অংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে।

হত্যা করা হয়েছে এমন আলামত পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। মরদেহের পাশাপাশি চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কে? আরও কারা জড়িত? এসবের প্রশ্নের উত্তরও খুঁজছে কলকাতা পুলিশ।

তবে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত একটি নাম এসেছে জোরালোভাবে। তিনি বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান শাহিন, কলকাতায় এসেছিলেন আমেরিকার পাসপোর্ট ব্যবহার করে। এই আখতারুজ্জামানই কলকাতায় এক লাখ রুপিতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন এক বছর আগে।

পরিকল্পিতভাবে খুন করে কলকাতা ছেড়ে বাংলাদেশ হয়ে ইতোমধ্যে তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একাংশ।

এদিকে আনোয়ার আজীম আনারকে হানি ট্র্যাপে ফেলে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের একটি সংবাদমাধ্যম।

সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে, এমপি আনারের ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামন শাহীন হত্যার পুরো পরিকল্পনা সাজান। আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেন শিলাস্তি রহমান নামের এক তরুণীকে। যার প্রকৃত নাম সিনথিয়া রহমান।

গত ১২ মে বাড়ি থেকে চিকিৎসার কথা বলে ভারতে যাওয়া এমপি আনার— শিলাস্তি রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। এই তরুণীকে ব্যবহার করে মূলত এমপি আনারকে ভারতে আনা হয়।

হত্যার ছক কষা আক্তারুজ্জামান শাহীন ১০ মে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু ওই সময় শিলাস্তি ওরফে সিনথিয়া ভারতে থেকে গিয়েছিলেন। এমপি আনারকে ভারতে নেওয়ার পাশাপাশি শিলাস্তি সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। এরপর আনারের মরদেহ গুম করতেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি।

কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, কিলিং মিশন সাকসেসফুল হওয়ার পর শিলাস্তি রহমান ওরফে সিনথিয়া রহমান গত ১৫ মে বিমানযোগে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফেরেন।

ইতিমধ্যে শিলাস্তি রহমানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ।

শিলাস্তি রহমান ছাড়াও বাংলাদেশের পুলিশ এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন সৈয়দ আমানুল্লাহ। যার আসল নাম শিমুল ভূঁইয়া। তিনি মূলত সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক। যিনি পাসপোর্টে শিমুল নাম বদলে আমানুল্লাহ নামে কলকাতা যান। কীভাবে তিনি শিমুল ভূঁইয়া থেকে আমানুল্লাহ হলেন এবং ভূয়া পাসপোর্ট ও এনআইডি তৈরি করলেন, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ডিবি পুলিশ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কলকাতার নিউ টাউনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে খুন করে ১৫ মে দেশে ফেরেন আমানুল্লাহ পরিচয় দেওয়া শিমুল ভূঁইয়া। পরে ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে আনোয়ারুল আজীম আনারকে তারাই নৃশংসভাবে খুন করেছেন।

এছাড়া কলকাতার সিআইডির হাতে আটক হয়েছে এক বাংলাদেশি যুবক। তার নাম সিয়াম। ১৩ মে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দিন তিনি নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া এ ঘটনায় জুবের নামে এক ক্যাব চালককেও আটক করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। হত্যার পর মরদেহের অংশ সরিয়ে নিতে ব্যবহার করা সাদা রঙের মারুতি গাড়িটি বৃহস্পতিবার ভোরে জব্দ করা হয়।

৩০ এপ্রিল অনলাইন রেন্টালের মাধ্যমে সেই গাড়ি ভাড়া করে ঘাতকরা। ১২ মে ভারতে যান আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি ওঠেন বরানগরের পূর্ব পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসার জন্য গোপালের বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু ওইদিন রাতেই নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বহুতল আবাসনে তাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। ১৪ মে ওই সাদা রঙের ক্যাব গাড়িতে করে প্রথম পর্যায়ে আজিম আনারের মরদেহের অংশ ফ্ল্যাট থেকে বের করা হয় একটি সুটকেসের মধ্যে করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিআইডির হাতে আটক সিয়ামের দায়িত্ব ছিল মরদেহের টুকরোগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে দেওয়া। কারণ ওই আবাসনের নির্দিষ্ট ফ্ল্যাট থেকে বেশ কিছু প্লাস্টিক ব্যাগ পাওয়া গেছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ওই ব্যাগগুলোতেই দেহের অংশগুলো ফেলা হয়েছে।

এ পর্যন্ত এমপি আনারের হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাংলাদেশে শিলাস্তি রহমান ও সৈয়দ আমানুল্লাহ সহ চারজন ও কলকাতায় ক্যাব চালক ও এক বাংলাদেশী আটক হয়েছে। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন বাংলাদেশ ও কলকাতা পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে সেই মূল পরিকল্পনাকারী শাহিন আটক নাকি সত্যিই পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি দুই দেশের পুলিশ।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু ও কলকাতার স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাসায় যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।

চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনোয়ারুল গোপালকে বলেন, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সাথে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।

১৭ মে আনোয়ারুলের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে বলেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনোয়ারুলের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর