ঢাকা | শনিবার | ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১:০২ অপরাহ্ণ
শিক্ষাশিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের দাবি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের

শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের দাবি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের

spot_img

শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত ও স্বাধীনতার কাঙ্খিত স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে শিক্ষাখাতে প্রস্তাবিত বাজেটের ২০ শতাংশ বা মোট জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ প্রদানসহ ১৫ দফা নীতিগত দাবি ও খাতভিত্তিক প্রস্তাবনা পেশ করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।

০১ জুন ২০২৪ শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল বশর আজিজী-এর সভাপতিত্বে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শিক্ষা বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল মুনতাছির আহমাদ।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর শিক্ষা বাজেট প্রস্তাবনায় ১৫ দফা নীতিগত দাবি ৮ দফা খাতভিত্তিক প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।

নীতিগত দাবি সমূহ:
১. দেশের সকল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।
২. নৈতিকতা সমৃদ্ধ জাতিগঠনে শিক্ষার সর্বস্তরে কুরআন ও ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. প্রাথমিক স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকল্পে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান।
৪. শিশুদের জন্য পাঠদান কে আনন্দঘন ও আকর্ষণীয় করার উদ্দেশ্যে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাদান নিশ্চিতকল্পে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বরাদ্দ প্রদান।
৫. কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান।
৬. একটি আন্তর্জাতিক মানের মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান।
৭. বেসরকারি বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যয়ভার কমাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
৮. শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহজ শর্তে ঋণগ্রহণ ব্যবস্থা চালু ও তা সহজলভ্য করতে হবে।
৯. নারী শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রাখতে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১০. দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধি ও হলে যথাযথ সিট ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে থোক বরাদ্দ দিতে হবে।
১২. কওমি মাদরাসার তাকমিল (মাস্টার্স) এর সার্টিফিকেট কে সাধারণ মাস্টার্সের সার্টিফিকেটের মত সমমানের মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের দেশে ও দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টিতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
১৪. আলিয়া শিক্ষার অবকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান।
১৫. প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কামিল মাদরাসা স্থাপনে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান।

খাতভিত্তিক প্রস্তাবনা সমূহ:
প্রাথমিক শিক্ষা: স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও সকল জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম ব্যর্থতা। সরকারি হিসেবে এখনো দেশের প্রতি ৪ জন মানুষের একজন নিরক্ষর। এই খাতে বরাদ্দ ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করার দাবী করা হয়।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা: একটি দেশের উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ, দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার মাত্র ১৭.২ শতাংশ এবং শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৪৭ শতাংশ। ২০২৩ -২৪ অর্থ বছরে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। জিডিপি হতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এই খাতে বরাদ্দ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করার দাবী করছি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: উচ্চ শিক্ষা টেকসই উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে যদি গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং সেই মানসম্মত গবেষণা নিশ্চিত হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট (পরিচালন) বরাদ্দ ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৫৫টি গাইডলাইন ও কৃচ্ছতা সাধনের নির্দেশনাবলী দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির জন্য চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি বাড়ানো এবং সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে সার্টিফিকেট বানিজ্যের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির নামে বেতন ফি বাড়ানো এবং কৃচ্ছতা সাধনের নামে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ রুম অস্বাস্থ্যকর। এসব রুমে বায়ু চলাচল, পর্যাপ্ত একোমুডেশান ও পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেটের টাকা সুষ্ঠুভাবে বন্টন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে খাবার মান অত্যন্ত নাজুক ও অপুষ্টিকর। অতএব, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বাজেটের নূন্যতম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়: মাত্র তিন দশকের কিছু বেশি সময় আগে গবেষণানির্ভর শিক্ষাপ্রক্রিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও এসব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ যেন সনদ বিক্রির বৈধ প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। শিক্ষক সংকট, গবেষণায় অনীহা আর নানা অব্যবস্থাপনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রায় ২০ টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ টিতে নেই উপাচার্য, প্রায় ৭৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় চলছে উপ উপাচার্য ছাড়া এবং ৪২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য রয়েছে কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন-এর তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৮ টি। এর মধ্যে ৯০ টির বেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি। এ সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যয় আকাশচুম্বী। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের তথ্য মতে যে পরিমাণ ব্যয় শিক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া হয় সে অনুযায়ী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই শিক্ষার মান, সুষ্ঠু পরিবেশ, পর্যাপ্ত ল্যাব, গবেষণাগার, কম্পিউটার ও প্রযুক্তির ব্যবস্থা। সুতরাং আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি করছি সরকারিভাবে এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ নজরদারি করতে হবে এবং মেধাবী, আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা স্তরের অন্যতম একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বিভিন্ন কলেজের অধীনে প্রায় ৩০-৪০ লাখ শিক্ষার্থী এখানে নিয়মিত অধ্যয়ন করছে। লক্ষ্য করার বিষয়, এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীপিছু বার্ষিক ব্যয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মতে, বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে মাত্র ৭০২ টাকা ব্যয় করা হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীপিছু মাসে ৫৮ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। টাকার পরিমাণ কয়েক বছর ধরে ক্রমেই কমছে। ইউজিসির প্রতিবেদন অনুসারে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালে একজন শিক্ষার্থীর জন্য গড়ে ব্যয় করেছে ১ হাজার ১৫১ টাকা। ২০২১ সালে তা কমিয়ে ৭৪৩ টাকা করা হয়। আর ২০২২ সালে একজন শিক্ষার্থীর জন্য ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ৭০২ টাকা। অর্থাৎ যা মাসে ৫৮ টাকার সামান্য বেশি (৫৮.৫)। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় বার্ষিক ৭০২ টাকা একজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের বিনিয়োগ নিছক হাস্যকর। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২ সালে গড়ে একজন শিক্ষার্থীর জন্য ব্যয় করেছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৪ টাকা। একইভাবে প্রতিবছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের বার্ষিক বাজেট বাড়ানো হয়েছে। অথচ কোন যুক্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপিছু বার্ষিক ব্যয় কমে মাত্র ৭০২ টাকা হবে? তা আমাদের বোদগম্য নয়। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের পেছনে সরকারের ব্যয়ের একটা সামঞ্জস্য থাকতে হবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যয় বাড়ালে নিঃসন্দেহে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানও বাড়বে। দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে যতজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, তার মধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশই পড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে। (বিআইডিএস) ২০২১ সালের এক জরিপের তথ্য বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছেন। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য গড়ে শিক্ষক রয়েছেন ১ জন, আবার কোথায়ও দেখা যাচ্ছে ১৩৬ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক ১ জন, যা শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে ব্যাপক সংকট তৈরি করছে। অতএব, শিক্ষার্থীপিছু বার্ষিক ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ শিক্ষার্থীদের বাস্তবমূখী ও কারিগরি দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কেবল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও দেশের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশা করছি এবং বিশেষ বরাদ্দ প্রদানের দাবী করছি।

কওমী মাদরাসা: দেশের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কওমি ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কওমি মাদরাসার ছাত্ররা সবসময় তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। পুষ্টিকর খাবারের অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় তারা বহুমাত্রিক সংকটে দিনাতিপাত করছে। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষার অভাবে চাকরির বাজারে প্রবেশে ও তাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। সংবিধানের ১৫,১৭,১৮ (ক) ২৮, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ-এ বর্ণিত অনেক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে দেশে কওমি মাদ্রাসা ছিল ১৯ হাজার ১৯৯ টি। জরিপ চলাকালীন সময়ে কওমি মাদ্রাসার ২৪.২৮ শতাংশ মেয়ে সহ মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ জন। উদ্বেগের বিষয় হল লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী কওমি মাদরাসায় পড়লেও কোন অর্থবছরের বাজেটেই সরকার তাদের জন্য কোন বরাদ্দ দেয়নি। কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার দাওরায়ে হাদীস সরকারী স্বীকৃতি পেলেও এখন পর্যন্ত সরকারি চাকরির বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ রাখা হয়নি। সুতরাং উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে আমাদের দাবি হলো কওমি মাদরাসার সাধারণ শিক্ষার্থীদের কে জাতীয় শিক্ষা ধারার সাথে সম্পৃক্ত করতে (আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া) শিক্ষা বোর্ডের জন্য এবারের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।

আলিয়া মাদরাসা: এদেশের মানুষের বোধ বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ শতবর্ষী পুরানো আলিয়া শিক্ষা ব্যবস্থার অবকাঠামো এখনো ভঙ্গুর। মাত্র তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হয়েছে যা মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে স্পষ্ট বৈষম্যের প্রমাণ বহন করে। এই খাতে বরাদ্দ ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার দাবী করছি।

শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থান: আমাদের দেশে স্বল্প শিক্ষিতের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত কর্মহীনের সংখ্যাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে ছোট হয়ে আসছে কর্মসংস্থানের পরিধি।প্রতিবছর ২০-২২ লাখ লোক শ্রমবাজারে ঢুকলেও কাজ পায় তার এক-তৃতীয়াংশেরও কম। বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং ও এমবিবিএসের মতো সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে অনেক উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী ঘুরছেন বেকারত্ব নিয়ে। দেশে স্বল্প শিক্ষিত ও মধ্যম শিক্ষিতের কর্মসংস্থানে যে সংকট, প্রায় তার অনুরূপ সংকট উচ্চ শিক্ষিতের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও। কারণ একটাই অর্থাৎ তাদের সংখ্যা বাড়লেও চাকরির সুযোগ বাড়ছে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে শিল্প-কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি বা সম্প্রসারণ ঘটছে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি খাতে বরাদ্দের অভাব পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তদারকির অভাবে শিল্প ও বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগের হিসেবের সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টির হিসেব সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিবিএসের সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। যা বেকারত্বের ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তারা সপ্তাহে এক ঘন্টা কাজ করার সুযোগ পায়নি, অন্যদিকে সপ্তাহে ৩৫ ঘন্টা কাজ করে এমন বেকারের হিসেব ধরলে বর্তমান বেকারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসেবে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা জরুরী। আমরা মনে করি কাঙ্খিত পরিমাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে জামানতবিহীন বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। বেকার শিক্ষিত নারী ও বেকার শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকা উন্নয়নের লক্ষ্যে বাজেটে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং নারীরা যাতে বিনা সুদে ঋণ নিয়ে ঘরে বসে কুটির শিল্প সামগ্রী তৈরি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবারের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করা হয়।

শিক্ষা বাজেট প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে এ সময় উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুর, জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল শিব্বির আহমাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসাইন নূর, অর্থ ও কল্যাণ সম্পাদক হোসাইন ইবনে সরোয়ার, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক খায়রুল আহসান মারজান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক মুহাম্মাদ ইবরাহীম খলীল, কওমি মাদরাসা সম্পাদক উবায়দুল্লাহ মাহমুদ, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক ইউসুফ মালিক, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুহাম্মাদ মেহেদী হাসান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর