ঢাকা | শনিবার | ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ
সারাদেশবোনের মেয়ে নিয়ে উধাও স্বামী, সন্তান নিয়ে অসহায় রাবেয়া

বোনের মেয়ে নিয়ে উধাও স্বামী, সন্তান নিয়ে অসহায় রাবেয়া

spot_img

তিন মাসের শিশু সামিয়া এবং নয় বছরের প্রতিবন্ধী মেয়ে লামিয়া এখনো বুঝেনা মায়ের চোখের পানির ভাষা। মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই এই শিশু দুটির। ওরা এখনো জানে না তাদের বাবা ইউনুস সরদার (৩১) ওদের ফেলে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বিয়ে করে পালিয়েছেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পরিবারটি। দুই সন্তান নিয়ে রাবেয়া আক্তারের মানবেতর জীবন কাটছে। সন্তানের ক্ষুধার যন্ত্রণা, সামাজিক বঞ্চনা এবং স্বামীর নেওয়া ঋণের কারণে রাবেয়া এখন কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খাজুরা গ্রামে পরিবারটির বসবাস। ২০১৩ সালে পারিবারিকভাবে রাবেয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় ইউনুসের। তাদের ঘরে ৯ বছরের প্রতিবন্ধী একটি মেয়ে ও তিন মাসের আরও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় দিশাহারা এ পরিবারটি।

জানা যায়, ইউনুস ও ওই স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীর পরিবার একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস করতেন। সেই সুবাদে দুই পরিবারের মধ্যে যাতায়াত থাকায় মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইউনুসের। টিকটকে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো বলেও জানায় তাদের পরিবার। সবশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি এনজিও থেকে লোন নিয়ে ওই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যান ইউনুস।

পরবর্তীতে উভয় পরিবার জানতে পারে যে, তারা বিয়ে করেছেন। কিন্তু কোথায় আছেন সেই হদিস মেলেনি এখনো। ওই শিক্ষার্থী স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর ইউনুস সম্পর্কে তার খালু হয়।

এদিকে ইউনুসের এমন কাণ্ডে দুর্বিষহ জীবন হয়ে উঠেছে রাবেয়ার। কারণ তার স্বামী পেশায় জেলে। তাই একদিন রোজগার বন্ধ থাকলে না খেয়ে থাকতে হতো তাদের। এখন স্বামী চলে যাওয়ায় দুই সন্তান নিয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন রাবেয়া।

এ বিষয় রাবেয়া বলেন, আমার এক মেয়ের বয়স নয় বছর সে প্রতিবন্ধী এবং আরেকজনের বয়স মাত্র ৩ মাস। এই অবস্থায় আমাদের রেখে আমার স্বামী আমার বোনের মেয়েকে নিয়ে চলে গেছে।এরমধ্যে যাওয়ার আগে আবার এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গেছে। এখন এনজিওর লোকেরা প্রতিদিন আসে টাকার জন্য। আমি এখন কীভাবে টাকা পরিষদ করব। এদিকে আমার সন্তানদের খাবারের জন্য ঘরে পানি ছাড়া কিছুই নেই। আমার ছোট ভাই দিনমজুরির কাজ করে। গত এক মাস যাবত তার টাকায় কোনোমতে খেয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকতে হয়। কখনো আশপাশের লোকজন কিছু খাবার দেয়। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এখনো বেচে আছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জয়নাল হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই পরিবারের একমাত্র আয়ের ব্যক্তি ছিল ইউনুস। তিনি এইভাবে পালিয়ে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে পরেছে তারা। একেবারে খারাপ অবস্থায় দিন কাটছে তাদের। আমাদের অনুরোধ দেশের যে প্রান্তে ইউনুসকে দেখবেন ধরিয়ে দেবেন।

পালিয়ে যাওয়া ওই শিক্ষার্থীর মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়ে দাদাবাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে খোঁজ করে জানতে পারি সে আমার বোনের স্বামীর সঙ্গে পালিয়েছে। এরপর আমরা থানায় জানাই। পুলিশ এসে উভয় পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা এর আগে পরে কিছুই জানতাম না।

মহিপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, আমাদের কাছে মৌখিকভাবে তারা বিষয়টি জানিয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে তারা মামলা কিংবা অভিযোগ করতে রাজি নয়, নিজেরাই খোঁজাখুঁজি করছে। তবে লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর