ঢাকা | সোমবার | ৭ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ
শিক্ষাক্যাম্পাসনোবিপ্রবিয়ানদের ভাবনায় ভাষার মাস

নোবিপ্রবিয়ানদের ভাবনায় ভাষার মাস

spot_img

চলে এলো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। দুয়ারে কড়া নাড়ছে ২১ শে ফেব্রুয়ারী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আমাদের আহ্লাদের সীমা নেই।

ভাষা নিয়ে আমাদের নানা বাগাড়ম্বর,বাঙালিই পৃথিবীর একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, সংগ্রাম করে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করেছে, আমাদের ভাষা সুন্দর, আমাদের ভাষা সমৃদ্ধ, আরো কত কি! তাই তো এ ভাষার জন্য এতো সংগ্রাম।কিন্তু সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত এ ভাষার প্রকৃত মর্যাদা কি আসলেই রহিত হচ্ছে? ধুমধাম করে ২১ ফেব্রুয়ারি একদিন নানা আয়োজন করলেই কি ভাষার প্রতি সম্মান পূর্ণ হয়ে যায়? এসব নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই, অন্যান্য সবার মতো ভাষার মাস নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) এর শিক্ষার্থীদের।

চলুন ভাষার মাস সম্পর্কে কয়েকজন নোবিপ্রবিয়ানদের ধারণা জেনে নেওয়া যাক-

ভাষা একটা জাতিসত্তার বহিঃপ্রকাশ। বাংলা ভাষা বাঙ্গালী সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ।বাংলা ভাষা শুধুমাত্র আমাদের মাতৃভাষায় নয় এটি আমাদের অস্তিত্বের মেরুদণ্ড। প্রতিটি ভাষায় চলমান স্রোতের মতোই খরস্রোতা হলেও ভাষার একটা নিজস্ব তাল, লয়, ছন্দ থাকে। যেগুলো সচেতন ভাবে ব্যবহার না করলে এবং যত্ম করা না হলে ভাষার আসল সত্ত্বার গন্ধ কালের মালা বদলে বিলিন হয়ে যাবে। এতো রক্ত, এতো সংগ্রাম, এতো ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করা আমাদের মাতৃভাষা আজ সীমান্তরেখা পেরিয়ে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যার সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে, সে তো অমূল্য রতন! অহংকারের বসন।
ভাষার মাসে আমার এতোটুকুই আহ্বান আসুন বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা ও ব্যবহার করি। চলুন ভাষার মাসে নানা আয়োজনের মাধ্যমে স্মৃতিচারণ করি সেই মহান শহীদদের, যাদের তাজা প্রাণের বদৌলতে রক্ষিত হয়েছে আমার-আপনার বাংলা ভাষা।
-মোঃ ইমরানুল ইসলাম, মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান, নোবিপ্রবি

বছরের পর বছর ভাষা আন্দোলনের বেদনা বিধুর স্মৃতি ও সংগ্রামী চেতনার অমিয় ধারা কে বহণ করে গৌরবোজ্জ্বল একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের দ্বারে ফিরে আসে। ভাষা আন্দোলনের মতো বিশেষ ঘটনা ও ভাষার জন্যে সালাম, জব্বার, রফিক, শফিকদের আত্মত্যাগ সুদূর প্রসারী তাৎপর্য বহণ করে আমাদের জীবনে। এই তাৎপর্য কোন নির্দিষ্ট জাতি কিংবা ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা সকল সীমানা পেরিয়ে আজ সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন স্রোতে বিশ্বায়িত। বাংলা’ শুধু একটি ভাষা নয়, বাংলা জুড়ে আছে আমাদের আবেগ, অনূভূতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংগ্রাম।
বর্তমান আধুনিক সভ্যতা আর পশ্চিমা সংস্কৃতির করাল গ্রাসে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষার মর্যাদা। আমাদের ভাষা শহীদরা যে চেতনা বুকে ধারণ করে ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগ করেছিল, তার কতোটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন আজ জাতির কাছে। ১৯৫২ সালের পর থেকে ভাষা দিবস পালিত হলেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হয়েছে কি? উচ্চ আদালত ও প্রশাসনসহ সর্বত্র এখন ইংরেজির দাপট চলতে দেখা যায়। বর্তমান অভিবাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করতে রীতিমতো যুদ্ধ করে। অথচ অবজ্ঞা করে বাংলা ভাষা, যা অর্জিত হয়েছে তাজা প্রাণের রক্তের বিনিময়ে। কত বুক খালি হয়েছে শুধু ভাষার জন্যে। কিন্তু আফসোস! আমরা তার দাম দিতে পারিনি।
একুশ আমাদের জাতীয় মুক্তির চেতনার উৎস হিসাবে কাজ করেছে। আমাদের মহান একুশ আজ স্বদেশের আঙিনা পেরিয়ে বৈশ্বিক চেতনায় পরিণত হয়েছে। নিজেদের ইতিহাসকে ও ভাষার ঐতিহ্যকে আপন করে নিয়ে বর্জন করতে হবে বিকৃত অপসংস্কৃতিকে। নতুন প্রজন্মকে বিশ্বায়িত করার সাথে সাথে তাদের আপন ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যাপারেও সচেতন করে তুলতে হবে প্রতিনিয়ত।
ফেব্রুয়ারিতে অঙ্গীকার হোক বিশ্বের বুকে মায়ের ভাষাকে সমুন্নত রেখে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। একুশের চেতনাকে সবার মধ্যে সঞ্জীবিত করার মধ্যেই নিহিত আছে এই মহান দিবসের সার্থকতা।
– সোনিয়া আক্তার, বাংলা বিভাগ, নোবিপ্রবি

বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষা ও মাতৃভাষা চর্চার আবেগ আর মুগ্ধতা নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস আসে ক্যালেন্ডারের পাতা জুড়ে। এই উৎসবের মাধ্যমে ভাষার গৌরব এবং ঐতিহ্যিকতা উচ্চারিত হয় এবং ভাষা সংরক্ষণ এবং প্রচারের দিক দিয়ে জনগণকে সচেতন করা হয়। আমাদের জাতীয় জীবনে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশের জনগণের মুখের ভাষা বাংলা। আর এ ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় মর্যাদা দানের লক্ষ্যে ৮ ফাল্গুন ১৩৫৩ বাংলা, ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সাল, রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারের মতো তরুণরা। একসময় আমরা ভাষার মাসের ২১ তারিখটি পালন করতাম শহীদ দিবস হিসেবে। কারণ, মাতৃভাষার মর্যাদার প্রশ্নে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের তরুণরা রাজপথে জীবন দিয়েছেন। সেসময় যুবকদের সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের বিনিময়েই এ দেশের মানুষ অর্জন করেছে সফলতা।
ভাষার মাসকে উপলক্ষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করা যেতে পারে যেমন ভাষা ও সাহিত্য সম্মেলন,ভাষা প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক আন্তর্জাতিক সাংগঠন,বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পাঠ্যচর্চা, লেকচার, ক্যাম্পাস মেলা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই ধরনের আয়োজনগুলি সহজেই ভাষার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বাড়াতে সাহায্য করবে।
পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যার জন্য প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল বাঙালি জাতি।কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এতটাই নিজেদের নিমগ্ন করে রেখেছি যে নতুন প্রজন্ম মুখে বাংলা-ইংরেজি মিশ্রিত বুলি না আওড়ালে বন্ধুমহলে তারা যেন জাতে উঠতে পারে না। এমনকি ভাষা দিবস পালন করে অনেকে ভারতীয় হিন্দি গানে। আর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া ভাষাটার উচ্চারণ আর বানানের সক্ষমতা তো অধিকাংশের জন্য আরও নাজুক।
বাংলা ভাষা আমাদের অস্তিত্বের মূলে হলেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলাকে উপযুক্ত স্থান দেওয়া এবং সঠিকভাবে বাংলা শেখার বিষয়টিকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা করে আসছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সকলের উচিৎ গতানুগতিক রীতি থেকে বের হয়ে বাংলা ভাষার যাথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক হ‌ওয়া , সকল ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং এ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া।
-মারিয়া জাহান, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নোবিপ্রবি

ফেব্রুয়ারী নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতির এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যের মাস। আমাদের জাতীয় জীবনে সকল চেতনার উৎস এই মাসটি। প্রতি বছরই আমরা গেয়ে থাকি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী’ । বাঙালিই এক মাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। এটি আমাদের বাঙালি জাতির অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। বাঙালির রক্তঝরা এই একুশে ফেব্রুয়ারি বর্তমানে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করেছে। তবে এটিও বলার অপেক্ষা রাখেনা যে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলা ভাষার প্রতি অবমাননা দিন দিন বেড়েই চলেছে আমাদের দেশে।
পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে, ব্যানারে মানা হচ্ছেনা বানানরীতি। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিকেই দেয়া হয় অধিক গুরুত্ব। একজন বাঙালি নাগরিক হিসেবে আমার প্রত্যাশা বাংলা ভাষার প্রতি সকল অবহেলার অবসান ঘটুক।
-মিজানুর রহমান, ফিশারিজ, নোবিপ্রবি

প্রতিবছরের ন্যায় এবছর আবারও হাজির হলো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি।আবারো আমাদের মনে করিয়ে সেই ৫২’র আত্নত্যাগ। ১৯৪৮ সালে ভাষা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়ে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে গিয়ে গণআন্দোলনের মুখে আমাদের প্রাণ প্রিয় বাংলা ভাষা তৎকালীন পাকিস্তানের উর্দু ভাষার সাথে বাংলা ভাষাও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় এবং ওই মাসের ২১ তারিখ ছুটির দিন হিসাবে এবং ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পায়।১৯৫২ সালের এদিনে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এ বাংলা ভাষা। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের শুধু শ্রদ্ধাঞ্জলির মাধ্যমে স্মরণ না করে তাদের বীরত্বের এবং আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভাষার মর্যাদা যেন ক্ষূন্ম না হয় ঐ দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ভাষার মাসকে উপলক্ষ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, সাহিত্যিক আলোচনা, ভাষাবিজ্ঞানের সেমিনার, লেকচার সহ বিভিন্ন আয়োজন করা যেতে পারে এবং ভাষার বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম করা যেতে পারে।একজন বাঙালি হিসেবে আমাদের ভাষার সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ভাষার উন্নতি সম্পর্কে জানতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা ভাষার চর্চা উদ্ভাবনশীল এবং সক্রিয়।
-মোঃ আরিফুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগ, নোবিপ্রবি

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালিদের মধ্য থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সকল ধর্ম-বর্ণের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে। পৃথিবীর বুকে বাঙালি একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঝরাতেও পিছুপা হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগ থেকে যে চেতনা লাভ করেছে, তা পরবর্তী সকল আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছে। ঐক্যবদ্ধ জাতি দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে ২১ এর চেতনা থেকে। বাংলাদেশের জনগণের স্বজাত্যবোধের স্ফূরণের উৎস ২১। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি হৃদয়ে সংগ্রামী চেতনার বীজ বপিত হয়, যার চূড়ান্ত পরিণতি স্বাধীনতা।
একুশের চেতনাকে বুকে ধারণ করে, এখন সময় হয়েছে দেশ গড়ার। ভাষার মাসকে আকর্ষণীয় করতে, শিক্ষা ও সংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমে ভাষা শিক্ষা, ভাষা শোকসভার আয়োজন করতে পারে। ভাষার মাসে বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি করতে লেকচার, সেমিনার ও প্রচার-প্রসারের উদ্যোগ নিতে হবে।
-নাজমুল ইসলাম, ওশানোগ্রাফি বিভাগ, নোবিপ্রবি

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা ভাষা নিয়ে চিন্তা করি,কথা বলি, শহীদদের মনে করি।কিন্তু এ ভাষার পেছনের ইতিহাস অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের উচিত সারা বছর এবং আমরণ ভাষার এ তাৎপর্য নিজের মধ্যে লালন করা,জাতীয় থেকে স্হানীয় যেকোন পর্যায়ে যেকোন অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা এবং শ্রদ্বা প্রদর্শন করা। তাছাড়াও ব্যাক্তিজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারে সোচ্চার হতে হবে।

spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর