শেষ ওভারে জয়ের জন্য লখনৌয়ের প্রয়োজন ১৭ রান। পরীক্ষিত সেনানী মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে বল তুলে দেন চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়। নিজের প্রথম ওভারে মাত্র ৪ রানের বিনিময়ে এক উইকেট তুলে নিয়ে দারুণ শুরু করা ফিজের স্রেফ ৩ বলেই ম্যাচ শেষ করে দিলেন সেঞ্চুরিয়ান মার্কাস স্টয়নিস।
শেষ ৬ বলে ১৭ রানের টার্গেট। উইকেটে তখন স্টয়নিসের মতো বিধ্বংসী ব্যাটার। অন্যদিকে, ঘরের মাঠ এম চিদাম্বরম চেন্নাই চেন্নাই স্লোগানে প্রকম্পিত। দলকে জিতিয়ে নায়ক হওয়ার দারুণ সুযোগ মুস্তাফিজের সামনে। টাইগার এই পেসারের প্রথম বল গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে এক লহমায় সমর্থকদের চুপ করিয়ে দিলেন স্টয়নিস। পরের দুই বলে দুটি চারে ম্যাচ তখন কেবল আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা। তিন নম্বর ডেলিভারিটিতে আবার হলো নো বল। ফ্রি হিটে ফের ৪ মেরে লখনৌকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন স্টয়নিস।
দিন তিনেক আগে নিজেদের মাটিতে প্রথম দেখায় চেন্নাইকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল লখনৌ। এবার চিপকে প্রতিশোধের ম্যাচে অধিয়াক রুতুরাজ গায়কোয়াড় আর শিবাম দুবের ব্যাটে হাতে শুরুটা দারুণ করে চেন্নাই। শেষ পর্যন্ত গায়কোয়াড় ১০৮ রানে অপরাজিত ছিলেন এবং দুবে করেছেন ৬৬ রান।
ঘরের মাঠে চেন্নাই বরাবরই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখিয়ে আসছে। আজকের আগে তাদের চার জয়ের তিনটিই এসেছে চিপকের এই ভেন্যুতে। তবে ওপেনিংয়ে তারা সেভাবে সুবিধা করতে পারছিল না। তার ব্যতিক্রম ঘটেনি আজও। প্রথম ওভারেই ব্যক্তিগত ৪ রানে আউট হয়ে যান রাহানে। যদিও সেই ধাক্কা ড্যারিল মিচেলকে সঙ্গী বানিয়ে সামলাতে থাকেন গায়কোয়াড়। তবে নিউজিল্যান্ডের এই ব্যাটার বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি, বিদায়ের আগে মাত্র ১১ রান (১০ বল) করেন।
মিচেল-গায়কোয়াড় এবং এরপর নামা রবীন্দ্র জাদেজা-গায়কোয়াড়ের পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি হলেও, সেখানে বড় অবদান ছিল চেন্নাই অধিনায়কের। জাদেজাও ফেরেন মাত্র ১৬ রানে (১৯ বল)। গায়কোয়াড় রান এবং একপ্রান্ত আগলে রাখায় অগ্রণী ভূমিকা রাখায় উইকেট পতনে সেভাবে সমস্যা হচ্ছিল না। এরপর শিবাম দুবে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন। গায়কোয়াড়ের চেয়েও এই তরুণ ছিলেন বেশি আগ্রাসী। ব্যাট করেছেন ২৪৪–এর বেশি স্ট্রাইকরেটে। অর্ধশতক করেছেন মাত্র ২২ বলে। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে দুবে ২৭ বলে ৩টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৬৬ রান করেন।
অন্যদিকে, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন চেন্নাই অধিনায়ক। তিনি ব্যক্তিগত শতক তুলে নেন ৫৬ বলে। একইসঙ্গে আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন বয়সী অধিনায়ক হিসেবেও সেঞ্চুরির নজির গড়েন গায়কোয়াড়। এদিন রুতুরাজ গায়কোয়াড় শেষ পর্যন্ত ৬০ বলে ১২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১০৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি ক্রিজে এসে পেয়েছেন কেবল ১ বল, ইনিংসের চূড়ান্ত বলটিকে তিনি পরিণত করেন চারের বাউন্ডারিতে। লখনৌর হয়ে ম্যাচে একটি করে উইকেট নেন ম্যাট হেনরি, মহসিন খান ও যশ ঠাকুর।
চেন্নাইয়র ঘরের মাঠে ২১১ রানের টার্গেট তাড়া করা, তার ওপর চিপকের মাটিতে বেশ সফল স্বাগতিক দলের দুই পেসার পাথিরানা ও মুস্তাফিজ। জয়টা বেশ কঠিনই ছিল লখনৌয়ের জন্য। এমন সমীকরণে লখনৌয়ের শুরুটা ছিল হতাশার।
কুইন্টন ডি’কক ফিরে যান কোনও রান না করেই। অধিনায়ক কেএল রাহুলকেও বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে দিলেন না মুস্তাফিজ। ১৪ বলে ১৬ রান করেন তিনি। এর পরই ইনিংসের হাল ধরেন স্টয়নিস। লখনউয়ের ডুবন্ত নৌকা কার্যত একার হাতে তীর পর্যন্ত নিয়ে যান তিনি। অনবদ্য সেঞ্চুরিও হাঁকিয়ে ফেলেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দেন নিকোলাস পুরান এবং দীপক হুডা। পুরান মাত্র ১৫ বলে ৩৪ রান করেন। আর হুডা ১৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন।
কিন্তু কোনও লড়াই-ই কাজে আসত না যদি না শেষ ওভারে স্নায়ুর চাপ সামলে চেন্নাইয়ের হাত থেকে জয় ছিনিয়ে আনতেন স্টয়নিস। শেষ ওভারে ১৭ রানের টার্গেটে মুস্তাফিজের ৩ বলেই চেন্নাইয়ের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন এই অস্ট্রেলিয়ান। ৩.৩ ওভারে ৫১ রান খরচায় এক উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো মুস্তাফিজকে। ফিজের মতো শুরুটা ভালো হলেও ইনিংসের ১৯তম ওভারে তিন চার হজম করেছেন মাথিশা পাথিরানাও। ৪ ওভারে ৩৫ রান খরচায় ২ উইকেট তুলে নেন তিনি।