ঢাকা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ
খেলাধুলা১২৮ বছরের অলিম্পিক এক ছাদে

১২৮ বছরের অলিম্পিক এক ছাদে

spot_img

নান্দনিক দেশ হিসেবে সুইজারল্যান্ডের খ্যাতি দুনিয়া জোড়া। বছরজুড়েই পর্যটকের ভিড় থাকে ইউরোপের এ দেশটিতে। জেনেভার নিকটবর্তী শহর লুজান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি এই শহরে অনেকেই আসেন অলিম্পিক মিউজিয়াম দেখতে। প্রতিদিন এত সংখ্যক মানুষ আসেন তাই লুজানের মেট্রো স্টেশন উচির নিচে লেখা ‘অলিম্পিক মিউজিয়াম’।

স্টেশন থেকে নামতেই দেখা মিলবে সুবিশাল উঁচু লেকের। পাহাড়ের সামনে সুবিশাল লেকে বিকেলের অবসর সময় কাটাতে আসেন সুইস ও নানা দেশের মানুষ। সেই লেকের কোল ঘেঁষেই ৫০০ মিটার সামনে হাঁটলেই অলিম্পিক মিউজিয়াম।

একটু উঁচু পাহাড়। আকা-বাকা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। অলিম্পিক মিউজিয়াম চার তলা বিল্ডিং। নিচতলা রিসিপশন ও অফিসিয়াল স্টোর। সোমবার ব্যতীত সপ্তাহের অন্য ছয় দিন সকাল থেকে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা অলিম্পিক জাদুঘর দেখতে পারেন নির্দিষ্ট ফি’র মাধ্যমে টিকিট কেটে। প্যারিস অলিম্পিকের মিডিয়া অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড থাকায় ফ্রি পাস কার্ড মিলল।

অলিম্পিক জাদুঘর মূলত দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায়। দ্বিতীয় তলা দিয়েই শুরু করতে হয়। শুরুটা একেবারে প্রাচীন অলিম্পিক থেকে। গ্রীক পুরান, জিউস মিথলজি সহ সকল কিছুই ধারাবাহিক বর্ণনা রয়েছে একটি কক্ষে। একটি পুরো কক্ষই প্রাচীন অলিম্পিক নিয়ে। প্রাচীন অলিম্পিক থেকে আধুনিক অলিম্পিকের প্রবর্তক পিয়েরো দ্য কুর্বোতা। তার ছবি বিশেষভাবে টাঙানো রয়েছে মাঝখানে। তার দর্শন-নীতিও সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ।

কুর্বোতার ছবির পর থেকে আধুনিক অলিম্পিকের যাত্রা শুরু। এক পাশের বোর্ডে ১৮৯৬-২০২৪ অলিম্পিক পর্যন্ত স্বাগতিক দেশের নাম আরেক দিকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রধানের ছবি ও তাদের মেয়াদকাল। বর্তমান আইওসি সভাপতি টমাস বাথ ১৯৭৬ সালে অলিম্পিক গেমসে ফেন্সিংয়ে স্বর্ণ জিতেছিলেন। স্বর্ণ জেতা তলোয়ার জাদুঘরে রেখেছেন আইওসি সভাপতি।

অলিম্পিক গেমস শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বৈশ্বিক বার্তা-সহমর্মিতা। সেই বার্তার ধারক-বাহক মশাল। ১৮৯৬ গ্রীস অলিম্পিক থেকে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের মশাল ধারাবাহিকভাবে সাজানো আছে একটি কক্ষে। প্রতি মশালের ছোট্ট ব্যাখ্যাও আছে সুন্দর করে। গেমসের অন্যতম আকর্ষণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। পাশের এক কক্ষের ডিসপ্লেতে বিভিন্ন গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ক্ষণচিত্র চলছে প্রতিনিয়ত। ১০-১৫ টা মিনি চেয়ারে বসে দর্শনার্থীরা ফিরে যাচ্ছেন মুহূর্তের মধ্যে অর্ধশতাব্দী আগে।

গেমস উদ্বোধনের পর মাঠের লড়াই শুরু। মাঠে ঘটনা নানা রেকর্ড-জন্ম হয় কিংবদন্তীর। অলিম্পিক জাদুঘরে সেই কীর্তি দেখারও সুযোগ রয়েছে। উপরের তলায় উঠতেই এক পাশে বোর্ড। ১৮৯৬-২০২৪ গেমস সারিবদ্ধ সাজানো। একটিতে ক্লিক করলে বোর্ডে উঠছে ঐ অলিম্পিকে কোন ডিসিপ্লিন ছিল।

কোন অলিম্পিকে কোন খেলা ছিল, শুধু সেটাতেই সীমাবদ্ধ নয় জাদুঘর। প্রায় প্রতি অলিম্পিকে কীর্তিমান ক্রীড়াবিদের স্মারকও রয়েছে। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে রেকর্ড গড়েছিলেন স্প্রিন্টার উসাইন বোল্ট। বোল্টের বিপ রয়েছে ২০০৮ কর্নারে। এ রকম প্রতি অলিম্পিকে বিশেষ কর্নার রয়েছে। প্রতি অলিম্পিকের বিশেষ ঘটনার জন্য আলাদা ডিসপ্লে বোর্ডও আছে। সাল ভিত্তিক অলিম্পিকে প্রেস করলে সেই অলিম্পিকের বিশেষ মুহুর্ত ফিরে আসে।

অলিম্পিক মানেই নানা ঘটনা-নানা ইতিহাস। লুজানে অলিম্পিক জাদুঘর সব অলিম্পিকের খন্ডচিত্র। তাই শুধু ক্রীড়াপ্রেমীরা নন, ইতিহাসবিদ ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ছুটে যান অলিম্পিক মিউজিয়াম। চোখের পলকেই কেটে গেল কয়েক ঘন্টা। লুজান থেকে জেনেভা ফেরার তাড়া। ফিরতে ফিরতে অলিম্পিক মিউজিয়ামের মুগ্ধতার পাশাপাশি বড় শূন্যতাও ভিড় করছিল বাংলাদেশের ক্রীড়া জাদুঘর কি হবে?

spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর