আগামীকাল রোববার (২৬ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে নেতাকর্মীদের ‘দুর্জয়’ সাহস নিয়ে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার সকাল ৬টা থেকে এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়ে চলবে টানা মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত। ‘একতরফা’ তফসিল বাতিলসহ সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকা সপ্তম অবরোধ কর্মসূচি এটি।
রিজভী বলেন, আগামীকাল থেকে আবারও শুরু হবে নিরবচ্ছিন্ন ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি। গণতন্ত্র ফেরানো, আজকে অন্যায়ভাবে গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা মানুষজনকে কারাবন্দি করা এবং তাদের মুক্ত করার যে কর্মসূচি, জনগণের মালিকানা ফেরত দেওয়ার যে কর্মসূচি সেটা হচ্ছে এই অবরোধ কর্মসূচি।
তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ এই অবরোধ কর্মসূচিতে গণতন্ত্রমনা মানুষ, সাধারণ জনগণ এবং দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা দুর্জয় সাহস নিয়ে রাজপথে এগিয়ে যাবে; এই প্রত্যয়, এই আশাবাদ আমি ব্যক্ত করছি। এই আন্দোলনে আপনি আমি-আমরা একা নই। আমাদের সবার অংশগ্রহণে এক দফার আন্দোলন আরও বিস্তৃত, বেগবান ও তেজোদীপ্ত হবে। মনে রাখবেন, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিও আর বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে চায় না, এদের পতন হবেই।
‘এবারের নির্বাচন হবে সিলেকটিভ’
রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচন জনগণ তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভার পরবর্তী মেয়াদের জন্য কাদের হাতে অর্পণ করতে চায় তা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের আলোকে নির্ধারণ করে দেয়। সেই নির্বাচনকে এখন হাসি-তামাশা, বাণিজ্য ও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিত্ব এখন শেখ হাসিনার দান-দক্ষিণা, খয়রাত, বিলি-বন্টন, ভাগ-বাটোয়ারা, উপহার-করুণায় পরিণত হয়েছে।
রিজভীর দাবি, ২০১৪ বিনা ভোটে অটোপাসের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট ডাকাতির পর এবার এবার আরেকটা ভাওতাবাজি নির্বাচন হবে। সেখানেও সিলেকশন করা থাকবে আগে, যেটা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বা তার দপ্তরের সেটা শুধু নির্বাচন কমিশন পাঠ করবে। ৭ জানুয়ারি ভোটের নামে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হবে অত্যন্ত নিখুঁত ধূর্ততায়, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে। ইলেকশনের দিন রাতে পাঠ করা হবে গণভবনের তালিকা।
‘সরকারের দ্বি-চারিতা’
রিজভী বলেন, এই প্রতারক মাফিয়া সরকার একদিকে বলছে নির্বাচনে আসুন, অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ আন্দোলনে সক্রিয় ও সাহসী নেতাদের টার্গেট করে বেছে বেছে তাদেরই কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। পুরোনো মামলায় সাজা দেওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে দুই বছরের নিচে কারোর সাজা হচ্ছে না। কারণ দুই বছরের সাজা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিবন্ধক।
তিনি আরও বলেন, এসব কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে ‘আজব আদালত’ থেকে! যেখানে মৃত নেতা, গুম হওয়া নেতাদেরও রেহাই নেই। মৃতদেরও সাজা দিচ্ছেন শেখ হাসিনার পুতুল আদালত। গত দেড় মাসে বিএনপির ৫৮২ জন নেতাকর্মীকে প্রহসনের বিচারে দণ্ডিত ঘোষণা করা হয়েছেন। আসামিদের অনুপস্থিতিতে চার্জ গঠন ও কারাগারে বন্দি অবস্থায় আসামিকে সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা শোনার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে সাজা ঘোষণা করা হচ্ছে।
রিজভী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৩২৫ গ্রেপ্তার এবং ১৩টি মামলায় ১ হাজার ৪৩৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ৪ হাজার ২শর বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার এবং ১৩৮টি মামলায় ১৬ হাজার ১২৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।