ঢাকা | মঙ্গলবার | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১:০৪ পূর্বাহ্ণ
শিক্ষাক্যাম্পাসশেখ হাসিনার আত্মীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটাতেন কুবি উপাচার্য

শেখ হাসিনার আত্মীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটাতেন কুবি উপাচার্য

spot_img
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় পরিচয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) প্রভাব বিস্তার করে অবৈধভাবে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ থেকে শুরু করে  বিভিন্ন বিভাগে নিজের পছন্দের লোকজনকে চেয়ারম্যান ও ডিন নিয়োগ দিতেন উপাচার্য অধ্যাপক ড এএফএম আবদুল মঈন।
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন সরকার তাকে তথ্য গোপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক উল্লেখ করে নিয়োগ দেওয়া হলেও পরে জানা যায় তিনি ঢাবির সাবেক অধ্যাপক। অভিযোগ রয়েছে ভিসি হওয়ার পর থেকেই শেখ হাসিনার ক্ষমতা দেখিয়ে প্রভাব খাটাতেন তিনি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার আত্মীয় বলে শিক্ষকদের হুমকি দিতেন। এছাড়াও বস্ত ও পাট মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মন্ত্রীপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের বন্ধু পরিচয় দিতেন। এছাড়াও নিজেকে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের মামাতো ভাই পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করতেন।
অভিযোগের রয়েছে গত ২ বছর মধ্যে বিতর্কিত নিয়োগ, যারা ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছেন তাদের নিয়ে নিজস্ব বলয় গঠন, আইন না মেনে বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ, ঢাকার গেস্ট হাউস ব্যক্তিগতভাবে কুক্ষিগত করে রাখা, নিয়ম না মেনে গাড়ি ক্রয়, তথ্য গোপন করে উপাচার্য হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত বেতন ও ইনক্রিমেন্ট নেওয়া। গত ২৮ মার্চ হত্যা মামলার আসামীদের নিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলা করেন। এসময় তিনি নিজেই একজন শিক্ষককে কনুই দিয়ে ঘুষি দেন। ঐদিনই শিক্ষক সমিতি ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। যা এখনও চলমান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে তার বিরুদ্ধে।
এর আগে ২০২৩ সালে উপাচার্যের এক বক্তব্য “দুর্নীতি হচ্ছে বলেই দেশ উন্নত হচ্ছে” এমন শিরোনামে খবর প্রকাশ করলে তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি রুদ্র ইকবালকে বহিষ্কার করেন এবং মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান মামাতো ভাই পরিচয় দিয়ে রুদ্র ইকবালকে উঠিয়ে নেওয়ার হুমকি দেন। পরবর্তীতে বহিস্কৃতের আপিলের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট থেকে বহিষ্কারাদেশ বাতিল করা হয়।
এবিষয়ে বহিষ্কার হওয়া রুদ্র ইকবাল বলেন, ২ আগস্ট বহিষ্কারের পর আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। আমার বন্ধু সাবেক সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকাশকে ডেকে বলে, এই ছেলেকে (ইকবাল) কিভাবে শায়েস্তা করা যায় তা আমার জানা আছে। আমার কাজিন ডিজিএফআইয়ের কে জানো না। ওর (ইকবাল) হাত-পা কিভাবে ভেঙে দিতে হয় তার পরিকল্পনা আমার করা আছে। এরপরই আমার এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থা  তদন্ত নেমে পড়ে। হয়রানি করা হয় বিভিন্নভাবে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় নিউজের কাছে তার দপ্তরে গেলে বক্তব্য দেওয়ার পরিবর্তে ডিজিএফআইয়ের জিয়াউল হকের ভয় দেখাতেন তিনি। বলতেন শিক্ষা শেষ জীবন শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে যেতে পারবা না।
ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম বলেন, ওনি (উপাচার্য)  দলীয় এজেন্ডা নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওনার চাকরি নেই। ওনি সেখানকার চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ছিলেন। ওনি (উপাচার্য) পরিচয় দিতেন শেখ পরিবারের সদস্য, গোপালগঞ্জ ওনার নানার বাড়ি, জিয়াউল আহসান (মেজর জেনারেল) ওনার মামাতো ভাই। এভাবে অবৈধভাবে সুযোগ নিয়ে উপাচার্য হয়েছেন। ওনি তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না৷ ওনার এর আগে প্রশাসনিক কোনো অভিজ্ঞতা ছিলো না। তারপরও এখানে উপাচার্য বানানো হয়েছে৷ তারপর ওনি ফেসবুকে প্রচার করতেন, জিয়াউল আহসান ওনার মামাতো ভাই, নানক ওনার কাছের লোক, শেখ পরিবারের সদস্য। তারপর যখন স্বৈরাচার সরকারের পরিবর্তন হলো তখন ওনি ফেসবুক থেকে সবকিছু সরিয়ে ফেললেন। এ থেকেই তো বোঝা যায় ওনি দলবাজির জন্য এখানে আসছেন। একজন দলবাজ উপাচার্যের হাতে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার কারণে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবস্থা। ওনার প্রথম শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী অসন্তোষ রয়েছে৷ তারপর শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছে তখন শিক্ষার্থীদের অরক্ষিত রেখে সিএনজিতে করে চলে গেছেন। ওনার দলবাজ প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর এবং পুলিশকে শিক্ষার্থীদের উপর লেলিয়ে দিলো। এবং এই সমস্ত বিশৃঙ্খলার জন্য ওনি দায়ী এবং ওনার দলবাজি দায়ী।
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর