স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সারাহ কুক (ব্রিটেনের হাইকমিশনার) সংলাপের বিষয়টি তুলেছেন। আমরা বলেছি, আমরাও সংলাপে বিশ্বাস করি। সারাহ কুকও বলেছেন, সংলাপের প্রয়োজন আছে।
আপনারা সংলাপের উদ্যোগ নেবেন কি না– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শর্তহীনভাবে যারা আসবেন, তাদের স্বাগত জানাব। আমরা দরজা বন্ধ রাখিনি। তবে সবকিছু হতে হবে সংবিধান অনুসারে।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুকের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর তিনি এ কথা বলেন।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উল্লেখযোগ্য কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেছেন, সংলাপ হচ্ছে প্রধান হাতিয়ার। আমরা বলেছি, আমরা সবসময় সংলাপকে স্বাগত জানাই। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত বলে আমরাও মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধান আমাদের যেভাবে কাঠামো করে দিয়েছে, সেটি অনুসারে সংলাপ করতে হবে। এটা সারাহ কুকও স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনিও বলেছেন, সংলাপের বিকল্প নেই। সব অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার কথা তিনিও বলেছেন। এটা কোনো পরামর্শ নয়, এটা আমাদের মধ্যে আলাপচারিতা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলছেন, আমরা সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে করতে চাই। সংবিধান মাথায় রেখেই আমরা আলোচনা করতে চাই। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই, সহিংসতা চাই না। তিনি আলাপ-আলোচনা করার জন্য সবসময় নির্দেশ দেন, যাতে পরিস্থিতি শান্ত থাকে, সেটি আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।’
আপনারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘যারা আসবে, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। শর্তহীনভাব আসতে হবে। সংবিধানের কাঠামো মেনেই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সংবিধানের বাইরে যদি কেউ কিছু বলেন, তাহলে তো সেটি হবে না।’
আপনারা ক্ষমতায় আছেন, তাদেরকে তো আপনাদের ডাকতে হবে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই তো আসছেন। তাদের প্রয়োজনে আমাদের ফোন করছেন। তারা তো বলতে পারেন আমরা কথা বলতে চাই, আমরা হরতাল চাই না, এটা তো তারা বলেননি কোনোদিন। আমরা তো বলছি, দরজা তো বন্ধ হয়নি। আমরা যেকোনো আলোচনায় রাজি আছে, সেটি সংবিধানের কাঠামোর মধ্য থেকে।’
৪৪টি রাজনৈতিক দলকে ডেকেছিল নির্বাচন কমিশন। সেখানে বিএনপি বলে দিয়েছে, তারা আলোচনায় যাবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সেটি তারা সবসময় বলে থাকে। ২০১৪ সালেও বলেছে। যে দলের প্রতি দেশের জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সেই দল নিশ্চিতভাবে নির্বাচনে এলে জয়লাভ করতে পারবে না। তারা সংলাপ চায় না, সহিংসতা চায়। সহিংসতা করে তারা একটি পরিবেশ তৈরি করতে চায়। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ সহিংসতা চায় না।’
এর আগে, ব্রাসেলস সফর নিয়ে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক সাংবাদিক জানতে চান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন নিয়ে শর্তহীন সংলাপে বসার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী?
বিএনপিকে খুনিদের দল আখ্যা দিয়ে দলটির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি একরকম উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, খুনিদের সঙ্গে আবার কীসের সংলাপ?
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলের সঙ্গে। কোন বিরোধী দল? বিরোধী দলটা কে? সংসদীয় নিয়মে বিরোধী দলের একটা ব্যাখ্যা আছে। বিরোধী দল হচ্ছে সেই দল যাদের সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে। এর বাইরেরগুলো পরিগণিত হয় না। আমেরিকায়ও হয় না। ট্রাম্পকে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কী বলবে? যদিও আমরা তাদের মতো সরকার ব্যবস্থায় নেই। এটা মাথায় রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা মানুষের সম্পদ নষ্ট করেছে, যারা আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নষ্ট করেছে, তারা বসে বসে ডিনার খাক (মার্কিন রাষ্ট্রদূত), ডায়ালগ করুক। এটা আমাদের দেশ, আমরা স্বাধীনতা এনেছি রক্ত দিয়ে।’