টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ফজরের নামাজের পরে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো তাবলীগ জামাতের তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এরমধ্যেই মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে তুরাগ নদীর তীর। তবে বৃষ্টি কিছুটা ভোগান্তির সৃষ্টি করলেও মুসল্লিদের উৎসাহে ভাটা পড়েনি। তারা বিপুল উৎসাহে বৃষ্টির ভেতরই বয়ান শুনেছেন, জিকিরে অংশ নিয়েছেন।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইজতেমার সাফল্য কামনা করে ও মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন। আগামী রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পাকিস্তানের মাওলানা আহমদ বাটলা তুরাগ পাড়ের লাখো মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন। এরপর সকাল ১০টায় তালিমের আমল করবেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। এদিন বাদ জোহর বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হক।
ইজতেমার মূল কার্যক্রমের তিন দিনই করা হবে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান, তাবলিগের কোন মুরব্বি আলেম কখন বয়ান করবেন এ বিষয়ে জানিয়েছেন আলমী শূরার মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম। তার দেওয়া তথ্যমতে, বাদ জুমা বয়ান করবেন জর্ডানের মাওলানা ওমর খতিব। বাদ আছর বয়ান করবেন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের। শুক্রবার বাদ মাগরিব বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ইজতেমার ময়দানের আলেম, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বয়ানের ব্যবস্থা রয়েছে। এদিন বাদ আসর ইজতেমা মাঠের মূল মঞ্চের পাশে যৌতুকবিহীন গণ বিয়ের আয়োজন করা হবে। ইজতেমার মাঠের গণবিবাহের আয়োজনে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তাবলীগের সাথীদের।
এদিকে লাখো মুসল্লির সমাগমে কানায় কানায় পরিপূর্ণ টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। ইতোমধ্যে ১৬০ একরের ময়দানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিরা ময়দানের আশপাশের সড়ক ও ফুটপাতে তাবু টানিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতের বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা। বৃষ্টি প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ভিজে গেছে মুসল্লিদের বিছানা ও মালপত্র। ময়দানের নিচু স্থানে জমেছে পানি। তবে বৃষ্টিতে ভোগান্তি বাড়লেও মুসল্লিরা ধৈর্য্য সহকারে খিত্তায় অবস্থান করছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর থেকে শুরু হয়েছে আঞ্চলিক বয়ান।
ইজতেমায় যোগ দিতে ভারতের ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য থেকে মুসল্লিরা আসছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক হাজারের মতো ভারতীয় মুসল্লি এসেছেন বলে ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে।
ইজতেমা ময়দানের পাশে স্থাপিত বিভিন্ন ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে টঙ্গী আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আর র্যাবের পাঁচটি ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে আকাশপথে হেলিকপ্টার টহল, ডগ স্কোয়াড টিম, ফুট প্যাট্রলিং, মোবাইল টিম, টহল টিম, নৌ টহল, সাইবার মনিটরিংসহ সাত স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকছে এবার বিশ্ব ইজতেমায়।
এছাড়া বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ইজতেমায় দুই মুসল্লি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তারা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌহদ্দীটোলা গ্রামের জামান মিয়া (৪০) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার ধামাউরা গ্রামের ইউনুছ মিয়া (৬০)।
অন্যদিকে মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মাহবুবুল আলম বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ৭ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা টহল শুরু হয়েছে। ইজতেমা নিয়ে যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে। সাইবার মনিটরিং ও সাইবার প্যাট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ময়দানের নিরাপত্তায় বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট টিম, ডগ স্কোয়াড, বিস্ফোরক প্রশিক্ষক টিম, ক্রাইম সিন, প্রশিক্ষক টিমসহ নৌবহর ও হেলিকপ্টার দিয়েও টহলের ব্যবস্থা থাকবে। পর্যাপ্তসংখ্যক সিসি ক্যামেরা, আইপি ক্যামেরা ও নাইট ভিশন ক্যামেরা থাকবে। পুলিশের পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা থাকবেন। ইজতেমা ময়দানে অগ্নি নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও ফায়ার ফাইটার টিমও মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া বিশ্ব ইজতেমায় নিরাপত্তা দিতে র্যাবসহ অন্যান্য স্ট্রাইকিং ফোর্সও মোতায়েন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামাতের নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারো বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সে হিসেবে এখন যারা মাঠে আছেন বা আসছেন তারা সবাই মাওলানা জুবায়েরপন্থী। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে জুবায়ের পন্থীদের ইজতেমা। আর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন ফেব্রুয়ারির ৯, ১০ ও ১১ তারিখে।