বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ককে ছাড়িয়ে বিশ্বের ধনকুবেরের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছেন বিলাসপণ্যের কোম্পানি এলভিএমএইচের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বার্নার্ড আর্নল্ট।
মার্কিন অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বসের প্রকাশিত বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। বার্নার্ড আর্নল্ট এবং ইলন মাস্কের সম্পদের পরিমাণ তুলে ধরেছে ফোর্বস।
এতে দেখা যায়, ইউরোপভিত্তিক কোম্পানি এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও শীর্ষ নির্বাহী বার্নার্ড আর্নল্ট ও তার পরিবারের বর্তমানে মোট সম্পদের পরিমাণ ২০৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। আর দ্বিতীয় স্থানে নেমে যাওয়া স্পেসএক্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ও টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ফরাসি ধনকুবের বার্নার্ড আর্নল্ট ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ২৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিপরীতে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের সম্পদ ১৩ শতাংশ বা ১৮ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে।
২০২২ সাল থেকে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তকমা নিয়ে এই দুই ধনকুবের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। ওই বছরের শেষের দিকে ইতিহাসে প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর স্বীকৃতি পান বার্নার্ড আর্নল্ট। সেই সময়ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে পেছনে ফেলেন তিনি।
ফোর্বসের রিয়েল-টাইম বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তি হলেন :
• ১. বার্নার্ড আর্নল্ট ও তার পরিবার। সম্পদের পরিমাণ ২০৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
• ২. ইলন মাস্ক। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২০৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার
• ৩. জেফ বেজোস। মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
• ৪. ল্যারি এলিসন। মোট সম্পদের পরিমাণ ১৪২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
• ৫. মার্ক জুকারবার্গ। মোট সম্পদের পরিমাণ ১৩৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
• ৬. ওয়ারেন বাফেট। মোট সম্পদের পরিমাণ ১২৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
• ৭. ল্যারি পেজ। মোট সম্পদের পরিমাণ ১২৭ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
• ৮. বিল গেটস। মোট সম্পদের পরিমাণ ১২২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
• ৯. সের্গেই ব্রিন। মোট সম্পদের পরিমাণ ১২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
• ১০. স্টিভ বলমার। মোট সম্পদের পরিমাণ ১১৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
ফোর্বসের তালিকার বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবেরের মধ্যে বার্নার্ড আর্নল্ট ছাড়া বাকি ৯ জনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার সূচকে এখনও বিশ্বের শীর্ষ ধনী রয়েছেন ইলন মাস্ক। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, টেসলার এই প্রধান নির্বাহীর বর্তমান মোট সম্পদের পরিমাণ ১৯৯ বিলিয়ন ডলার। আর তারপরই দ্বিতীয় স্থানে আছেন আরেক মার্কিন ধনকুবের জেফ বেজোস। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮৪ বিলিয়ন ডলার।
ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার সূচকে এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও শীর্ষ নির্বাহী বার্নার্ড আর্নল্ট আছেন তৃতীয় স্থানে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮৩ বিলিয়ন ডলার।
• কে এই বার্নার্ড আর্নল্ট?
১৯৪৯ সালে ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় শহর রোবেইক্সের এক ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম আর্নল্টের। তার পরিবারের ভবন নির্মাণের ব্যবসা ছিল। ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ইকোল পলিটেকনিক থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর পারিবারিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ফেররেট স্যাভিনেলে যোগ দেন তিনি। ১৯৭৮ সালে ওই কোম্পানির চেয়ারম্যান হন।
এর ছয় বছর পর ১৯৮৪ সালে দেনার দায়ে প্রায় ডুবে যাওয়া টেক্সটাইল কোম্পানি ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর কিনে নেন আর্নল্ট। বিপুল পরিমাণ অপরিশোধ্য ব্যাংক ঋণের বোঝা থাকায় কোম্পানিটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছিল ফরাসি সরকার। তবে দেউলিয়া হয়ে পড়লেও ফ্রান্সের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্র্যান্ড ছিল ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর।
দেনায় জর্জরিত ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর আর্নল্টের নেতৃত্বে ফের ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবং একসময় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল পণ্যের কোম্পানি হিসেবে জায়গা করে নেয়। এলভিএমএইচের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘‘দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে ক্রিশ্চিয়ান ডায়োরকে তিনি পুনরুজ্জীবিত করেছেন এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি কোম্পানিতে রূপান্তর করেছেন।’’
এরপর ১৯৮৯ সালে নিজের মালিকানাধীন কোম্পানি লুই ভিটন, ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর, হাবলট এবং লে পার্সিয়ান নিয়ে গঠন করেন এলভিএমএইচ গ্রুপ অব কোম্পানিজ। গ্রুপের অধিকাংশ শেয়ারের মালিকানা নিজের হাতে রাখায় এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও শীর্ষ নির্বাহী হন আর্নল্ট। এখনও এই পদেই আছেন তিনি।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে আর্নল্ট এলভিএমএইচকে বিলাসবহুল শৌখিন পণ্যের পাওয়ার হাউসে পরিণত করেছেন। শ্যাম্পেন, ওয়াইন, ফ্যাশনেবল পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ঘড়ি, গয়না, প্রসাধনী ও পারফিউম পণ্যের এক বিরাট সম্ভার এলভিএমএইচ। বর্তমানে সারাবিশ্বে এলভিএমএইচের সাড়ে ৫ হাজার শোরুম বা আউটলেট আছে।
ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি নয় ১৯৯২ সালে চীনের রাজধানী বেইজিংয়েও নিজেদের গ্রুপভুক্ত কোম্পানি লুই ভিটনের শোরুম খোলে এলভিএমএইচ। এভাবে এশিয়ার বৃহত্তম বাজারেও নিজের আধিপত্য জানান দেন ইউরোপের এই ধনকুবের।
ব্যক্তিজীবনে বার্নার্ড আর্নল্ট দু’বার বিয়ে করেছেন; তার ৫ সন্তান রয়েছে। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুসারে, আর্নল্টের পরিবারের প্রত্যেকেই তার প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচ বা এর অন্তর্ভুক্ত কোনো ব্র্যান্ডের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।