সিয়াম ও শাহিনুর সম্পর্কে মামা-ভাগ্নি ছিলেন। তাঁদের প্রেমে বাধা হয়নি সম্পর্কের জটিলতা। বিয়েও করে ফেলেছিল তাঁরা। তবে এমন সম্পর্কের দুটি মানুষের প্রেম–বিয়ে সমাজের চোখে ‘দৃষ্টিকটু’ বিবেচনায় তাঁদের মেনে নেয়নি পরিবার। অভিমানে বিয়ের ছয় মাসের মাথায় আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে এ যুগল। এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারী) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে সিয়াম–শাহিনুর যুগলের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। তবে ইসলাম ধর্মে এমন বিয়ে বৈধ বলে নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশ জানায়, সোমবার বিকেলে বাঞ্ছারামপুরের পৌর এলাকার পোস্ট অফিস সংলগ্ন সামাদ ভান্ডারীর বাড়ির ভাড়াটিয়া সিয়াম (১৯) ও তাঁর স্ত্রী দরিয়াদৌলত গ্রামের শাহিনুর (১৯) আত্মহত্যা করতে একসঙ্গে পোকামাকড় নিধনের ‘কেরির টেবলেট’ খেয়ে ফেলে। সংকটাপন্ন অবস্থায় স্থানীয়রা তাঁদের চিকিৎসার জন্য বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ঢাকায় নেওয়ার পথে শাহিনুরের মৃত্যু হয়। সিয়ামের মৃত্যু হয় নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ হাসপাতালে।
সিয়ামের বাবার নাম রফিক মিয়া আর শাহিনুরের বাবা জয়নাল মিয়া। ২ বছর প্রেমের পর মাস ছয়েক আগে সিয়াম-শাহিনুর বিয়ে করে। সম্পর্কে তাঁরা মামা-ভাগ্নি হন। বর সিয়াম হলেন কনে শাহিনুরের আপন খালার দেবর। এ কারণে শাহিনুরের পরিবার এই বিয়ে মেনে নেয়নি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, শাহিনুর-সিয়াম দম্পতি বাঞ্ছারামপুরে সিয়ামের মায়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকত। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তি থেকে তাঁরা দুজন কেরির টেবলেট খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
শাহিনুরের মামা বোরহান বলেন, ‘৮ মাস আগে তাঁরা ভালোবেসে বিয়ে করে। তাঁদের বিয়েতে দুই পরিবার রাজি ছিল না। যে ছেলেকে বিয়ে করেছে সে (সিয়াম) সম্পর্কে শাহিনুরের মামা হয়। আর আমার বেয়াই। এটা মানসম্মানের ব্যাপার।’
বিয়ের পর বর সিয়াম ও তাঁর মায়ের নামে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান বোরহান। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে এক সপ্তাহ আগেও ঝগড়াঝাটি হয়েছিল।”
অবশ্য সিয়ামের চাচা বকুল বলেন, ‘কী কারণে আত্মহত্যা করেছে সেটি আমার জানা নেই।’ তিনি সিয়ামের মায়ের বাসা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে থাকেন বলে জানান বকুল।
বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শাহিনুরের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সিয়ামকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ময়নাতদন্তসহ যাবতীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়। এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
মামা–ভাগ্নির বিয়ের বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আমিন ইকবাল বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে আপন মামা–ভাগ্নির মধ্যে বিয়ে অবৈধ। আপন মামা–ভাগ্নি ছাড়া দূর সম্পর্কীয় মামা–ভাগ্নির মধ্যে বিয়েতে কোনো বাধা নেই, তা বৈধ। অবশ্য আমাদের দেশের সামাজিক বাস্তবতায় এ ধরনের বিয়েকে দৃষ্টিকটু মনে করে অনেকে। কেউ দূর সম্পর্কীয় মামা বা ভাগ্নিকে বিয়ে করলে তা নেতিবাচকভাবে দেখা উচিত হবে না।’