গণপ্রকৌশল দিবস-২০২৪ ও আইডিইবি’র ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র-সময়ের দাবি’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ (১৪ নভেম্বর ) রাজধানীর কাকরাইলস্থ আইডিইবি ভবন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।
সেমিনারে আলোচক ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাভষা ইনস্টিটিউ এর মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ” ব্রিটিশ শাসনকাল থেকেই সরকারি চাকুরিক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বিরাজমান ছিল। পরবর্তীতে পাকিস্থানি শাসন আমলে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছিল, যা আমাদের মহান ৭১ এ স্বাধীনতা অর্জন কে তরান্বিত করে। দুঃখের বিষয় স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশেও এর কোন সমাধান হয়নি বরং গত ১৬ বছর ধরে বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট সরকার সরকারী চাকুরীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিলো। দেশের সাধারন শিক্ষার্থীরা গত কয়েক বছর ধরে সরকারি নিয়োগের কোটা বিলপ্তি সহ অন্যান্য বৈষম্যমুলক নিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিলো। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার তার যৌক্তিক সমাধান না করে বিভিন্ন উপায়ে উল্টো দমন করার নৃশংস চেষ্টা করে। যার ফলশ্রুতিতে নতুন প্রজন্ম জেন- জেড দেশের আপামর জনতাকে সাথে নিয়ে সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক দফা দাবির ভিত্তিতে ও শহীদ আবু সাইদের মতো সহস্রাধিক জীবনের আত্মত্যাগের মাধ্যমে জুলাই আগস্ট-২০২৪ বিপ্লব সংগঠিত করে। এই বিপ্লব আজ পুরো দেশবাসীকে সকল বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তির অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করেছে।
গ্রাজুয়েট প্রকৌশলীদের সাথে দ্বৈরথ না করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইসমাইল বলেন, গ্রাজুয়েট প্রকৌশলীদের সাথে দ্বৈরথ নয় বরং সহকর্মী হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। একটি দেশ ও জাতি উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করতে হলে প্রকৌশলীদের কর্মপরিবেশ বৈষম্যের বিলোপ ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য গ্রাজুয়েট প্রকৌশলীদের সাথে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সঠিকভাবে ব্যবহার জরুরি বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই উচ্চতর প্রশিক্ষন ও শিক্ষা অর্জনের সুযোগ তরান্বিত করে উভয়পক্ষকে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে। গ্রাজুয়েট প্রকৌশলীদের সাথে দ্বৈরথ নয় বরং সহকর্মী হিসাবে বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে আমরা এই মানব সম্পদের সরবচ্চ ব্যবহার করতে পারব। কর্মক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারদের মূল্যায়ন যোগাতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে করা আবশ্যক।
এসময় মূল পাঠ উপস্থাপনায় বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সামগ্রিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ বলেন, একটি বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র কেবল ন্যায়বিচারের প্রশ্ন নয়, বরং এটি কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সামগ্রিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র থেকে নতুন চিন্তা ও উদ্ভাবনী কৌশল সৃষ্টি হয়, যা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কোন প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কার্যক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করতে হলে বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্রের কোন বিকল্প নাই। বৈষম্যের কারণে কোন প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র সবচেয়ে যোগ্য মানবসম্পদ থেকেই বঞ্চিত হয়না বরং বিদ্যমান মানবসম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার ও সংশ্লিষ্ট জনগণ এর সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।’