বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফরের নানান দিক তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো। ভোটে আসলে আবার করবো। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়! সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলে। আমি বাবা-মা সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। কত বছর হয়েছে রাজনীতির? একটা স্বপ্ন ছিল- জাতির পিতার, সেটা করেছি, এখন তো কেউ না খেয়ে থাকে না।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যদি বলে রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে, তাহলে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিই, সার বন্ধ করে দিই, সব বন্ধ করে বসে থাকি, রিজার্ভ ভালো থাকবে। রিজার্ভ বেশি রাখা প্রয়োজন, না কি দেশে মানুষের ভালো ভাবে রাখা প্রয়োজন, কোনটা?
সরকারপ্রধান বলেন, করোনার সময় আমাদের আমদানি বন্ধ ছিল, রপ্তানি বন্ধ ছিল, যোগাযোগ বন্ধ ছিল, যাতায়াত বন্ধ ছিল, সব কিছু বন্ধ ছিল। যার জন্য আমাদের রিজার্ভ বেড়ে ছিল। এরপর যখন সব কিছু খুলে গেল, আমাদের আমদানি করতে হলো, তখন আমাদের রিজার্ভ কমবে, এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার প্রশ্ন হচ্ছে– আমি যখন ২০০৯ ক্ষমতা গ্রহণ করি তখন রিজার্ভ কত ছিল? ১ বিলিয়নও ছিল না। ০.৭৭ রিজার্ভ ছিল। আমি যখন ৯৬ সালে সরকার করে রিজার্ভ কত ছিল? বিলিয়নের ধারে কাছেও ছিল না। যতটুকু বেড়েছে, আমাদের সরকারের আমলে আমরা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। ৮০০ ডলারের পরিবহন খরচ এখন তিন হাজার, চার হাজার ডলার লাগছে, তারপরও তো পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছি, এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। আমরা নিজেরা উৎপাদন করব, নিজেরা খাব, নিজেরা চলব।
‘রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলতে পারে। যদি এত বেশি কথা হয়, তাহলে পুরোনো অবস্থানে ফিরে যাব। যখন সরকার গঠন করেছিলাম তখন যত ছিল, এখানে এনে রেখে আবার নির্বাচন করব। করে আবার বাড়াব। বিদ্যুৎ শতভাগ থেকে কমিয়ে ২৮ ভাগে নিয়ে আসব। সবাই একটু টের পাক, কি ছিল।’
সরকারপ্রধান বলেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলেছি প্রতিদিন যেন একটু লোডশেডিং দেয়, তাহলে মানুষের মনে থাকবে লোডশেডিং আছে। পয়সা দিয়ে তেল কিনে জেনারেটর চালাতে হবে। তখন আক্কেলটা ঠিক হবে। হ্যাঁ, এই অবস্থা তো ছিল। এখন তো আমরা করে দিচ্ছি। ভর্তুকে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম, আমাকে ভোটের হিসাব শেখাতে হবে না। আমরা সেই আইয়ুব খানের আমল থেকে আন্দোলন করে রাস্তায় থাকি। আমরা এমন না যে নতুন এসেছি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবই তো ভোট চোর। আওয়ামী লীগ আসার পর আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করতে হয়নি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেন। কাজের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের আস্থা অর্জন করি। আর এই দেশের মানুষ এখন জানে নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। নৌকায় ভোট দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন ৪১ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এটা কারো এনজিওয়ের মাধ্যমে হয়নি, কারো ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে হয়নি। বরং আমরা ক্ষুদ্র সঞ্চয় করাচ্ছি। আমরা দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে এনেছি, বর্তমানে দেশে হতদরিদ্র মাত্র পাঁচ পার্সেন্ট। ইনশাআল্লাহ ওটুকুও থাকবে না। হতদরিদ্র থাকবে না। এখন একটা সন্দেহের বিষয় আছে, আমাদের মানুষ কতটুকু সচেতন সেটা হলো কথা। তবে কিছু লোক তো আছে, যারা চোখ থাকতে অন্ধ এবং কান থাকতে বধির। তাহলে তো আর কিছু করা যায় না।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অধিবেশন শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে পৌঁছান তিনি। দুই দেশে মোট ১৬ দিনের সফর শেষে বুধবার (৪ অক্টোবর) দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।