নোয়াখালীর কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের জগদানন্দ গ্রামে বিজয় মেলার নামে অশ্লীল নৃত্য আসর চালানোর অভিযোগ উঠেছে দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানরা হলেন, ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মুনাফ।
অভিযোগ রয়েছে, গত বছর এ মেলায় রমরমা দেহ ব্যবসা চালানো হয়। পরে সরকারের একাধিক সংস্থা মেলা পরিদর্শন করে বেশ কিছু আপত্তিকর উপকরণ উদ্ধার করে মেলা বন্ধ করে দেন। একাধিক সূত্র জানায়, ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানি ওই মেলার উদ্বোধন করেন। সে প্রভাব খাটিয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করেই চলছে।
বুধবার দিবাগত রাতে সরেজমিনে মুকবুল চৌধুরী হাট বিজয় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় রয়েছে ১৫-২০টি দোকান। মেলার মূল আর্কষণ হল নগ্ন নৃত্যের আসর। রাত ১১টা থেকে উঠতি বয়সী স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী আর যুবকদের নগ্ন নৃত্য আসরে উপছে পড়া ভিড় দেখা যায়। তবে নগ্ন নৃত্য মঞ্চে মোবাইলে ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণ কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। মেলায় অশ্লীল নৃত্য করেন একাধিক কিশোরী,তরুণী ও যুবতী। তাদের শরীরে হরদম টাকা ছিটাচ্ছেন এক টাক মাথার লন্ডন প্রবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ২৫ জানুয়ারি থেকে আগাম ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যন্ত মুকবুল চৌধুরী হাট বিজয় মেলার অনুমোদন নেয় মেলা আয়োজক কমিটি। মেলায় তারা যাত্রা পালার অনুমোদন নিলেও অবলিলায় রাতের আঁধারে চলছে অশ্লীল নৃত্য আর ভ্রাম্যমাণ মাদক কারবারিরা সুযোগ বুজে বেচাকেনা করছে হরেক রকমের মাদক। এ উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে দৈনিক প্রচারাভিযান অব্যাহত রাখলেও মূলত যাত্রাপালা অনুষ্ঠানের নামে সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু করা হয় ‘ভ্যারাইটিজ শো’ নামক অশ্লীল নৃত্য। এর ফলে এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিতসহ উঠতি বয়সী যুবসমাজ রসাতলে যাওয়ার আশংকায় এলাকার সুশীল সমাজ ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মি জহুরুল হক চৌধুরী ওরফে জহির বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা এ মেলায় চলতে থাকা অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি করে আসছি। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি আমলে নেয়নি। বরং টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কতিপয় গণমাধ্যম কর্মি এ মেলাকে উৎসাহিত করছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মেলার তদারক আবদুল মান্নান মুনাফ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন অশ্লীল নৃত্য কি সেটা আমি বুঝিনা। মেলার সব কিছু দেখাশোনা করছে বর্তমান চেয়ারম্যান। আপনি তার সাথে কথা বলেন।
ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী বলেন, এলাকার আমজনতা চায়, আমি কি করব। জনগণ চায় এটা। আমরাতো মানুষ নিয়ে বাস করতে হবে। তিনি উল্টো প্রশ্ন রাখেন, মানুষ ছাড়া কি বাস করতে পারবেন।
কবিরহাট থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। যখন বলা হয় গণমাধ্যম কর্মিদের কাছে ভিডিও চিত্র রয়েছে তারপর তিনি বলেন মেলার আয়োজক কমিটি জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েছে।
কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেলে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন অনেকে ঢালাও ভাবে অভিযোগ করতে পারে। তবে এটা সত্য নয়।