ঢাকা | রবিবার | ৭ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ
শিক্ষাক্যাম্পাসনিজের খেয়াল-খুশিমত টাকা খরচ করে কুবি উপাচার্য: শিক্ষক সমিতি

নিজের খেয়াল-খুশিমত টাকা খরচ করে কুবি উপাচার্য: শিক্ষক সমিতি

spot_img

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) এর ২১ (ঢ) ধারা অনুযায়ী কোন অ্যাওয়ার্ড কিংবা বৃত্তি প্রবর্তন করতে হলে সিন্ডিকেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। আইন এর ২১ (ঢ) ধারা মোতাবেক, ‘ডিগ্রী, সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, বৃত্তি, ফেলোশীপ, স্কলারশীপ, স্টাইপেন্ড, পুরস্কার, পদক ইত্যাদি প্রদানের উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়ন এবং উপযুক্ত ব্যক্তিকে তাহা প্রদানের জন্য একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক সিন্ডিকেটের নিকট সুপারিশ করতে হয়’। অতঃপর সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে সেটি প্রদান করা আইনসঙ্গত। এ সংক্রান্ত কোন বিধান প্রণয়ন করা হয়নি, একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনাও হয়নি এবং সিন্ডিকেটেরও অনুমোদন নেয়া হয়নি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের কোন টাকা খরচ করতে হলে অর্থ-সংক্রান্ত কমিটি (এফসি)’র অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়। সেটিও করা হয়নি। কাজেই এ বিষয়টি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বেআইনি। শিক্ষকরা অ্যাওয়ার্ড পান এবং শিক্ষার্থীরা আরো বেশি বৃত্তি পান সেটা নিয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আপত্তির জায়গা হচ্ছে, মাননীয় উপাচার্য সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে এ কাজটি করেছেন। শুধু তাই নয়, উপাচার্য নিজের খেয়াল-খুশিমত ভর্তি পরীক্ষার টাকা খরচ করছেন। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার টাকা থেকে মাননীয় উপাচার্য প্রায় ৪ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের টাকা থেকে মাননীয় উপাচার্য প্রায় ৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। ভর্তি পরীক্ষার শিক্ষকদের অংশের টাকার পরিমাণ কমিয়ে উপাচার্য বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড দেন, বৃত্তি দেন কিন্তু নিজের অংশের টাকার পরিমাণ তিনি প্রতিবছরই বাড়িয়ে নিচ্ছেন। এ হার শিক্ষকদের চেয়ে প্রায় ৮/১০ গুণ। অতীতে উপাচার্যরা শিক্ষকদের চেয়ে দুই বা তিনগুণ বেশি অর্থ নিতেন কিন্তু তিনি নিচ্ছেন ৮- ১০ গুণ বেশি।

রবিবার (২৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত এক ‘মিথ্যা’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মাহমুদুল হাছান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন মন্তব্য করেন শিক্ষক সমিতি।

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, গত ১৯ মার্চ সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।ভর্তি পরীক্ষার আয় থেকে শিক্ষকদের জন্য মর্যাদাসম্পন্ন ‘ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড’ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ভাইস চ্যান্সেলর বৃত্তি’ প্রবর্তন করেছেন মাননীয় উপাচার্য। আমরা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে এ দুটি ক্ষেত্রে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় আইন এর ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।

তারা আরও বলেন, সেশন জট দূরীকরণসহ যে সকল সেবা প্রদানের কথা বলা হয়েছে সেখানে বর্তমান উপাচার্যের কোন কৃতিত্ব নেই। একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করে সেশন জট দূরীকরণের উদ্যোগ বিগত উপাচার্য মহোদয়দের সময় থেকেই নেয়া হয়েছে এবং সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শিক্ষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং শিক্ষথীদের সার্বিক সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জট কমে এসেছে, এটা সত্য তবে এর পুরো কৃতিত্ব শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলের। বিভাগগুলোতে ন্যূনতম কোনো সুযোগ-সুবিধা মাননীয় উপাচার্য বৃদ্ধি করতে পারেননি। শিক্ষক স্বল্পতায় বিভাগগুলো চলছে ধুকে ধুকে। প্রতিটি বিভাগে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা গড়ে ৬-৭ জন করে। উপাচার্য গত দুই বছরে মাত্র ৭ জন শিক্ষকের পদ এনেছেন, যেখানে পূর্বের উপাচার্য যোগদানের ছয় মাসের মাথায় ৬৬ জন শিক্ষকের পদ এনেছিলেন। উপাচার্যের আন্তরিকতা এবং সক্ষমতা এ ধরনের পরিসংখ্যান থেকেই প্রতীয়মান হয়। উপাত্তবিহীন মৌখিক বাগাড়ম্বর, মিথ্যাচার এবং আত্মপ্রচারের মাধ্যমে সক্ষমতা প্রকাশ পায়না।

মাননীয় উপাচার্য যোগদানের পর থেকে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও আইন বহির্ভূত কার্যকলাপের কারণে শিক্ষকরা নানাভাবে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তারই প্রেক্ষাপটে গত ১২/০৩/২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাননীয় উপাচার্যের কাছে শিক্ষক সমিতি ৭টি দাবি উপস্থাপন করেছিল। দাবিসমূহ বিভিন্ন সময় উপাচার্যকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো সত্ত্বেও উপাচার্য সেগুলো সমাধানের ন্যূনতম কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি, বরং শিক্ষকদেরকে তিনি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাঁর কার্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। গত ১৯/০২/২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখে উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষকরা যে ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হয়েছেন আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ১ মাসে মাননীয় উপাচার্য এটির সুষ্ঠু বিচারের দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। পক্ষান্তরে তিনি এ বিষয়টিকে নিয়ে খামখেয়ালিপনা ও দীর্ঘসূত্রিতার আশ্রয় নিয়েছেন

শিক্ষক সমিতি মনে করে প্রমোশন/আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা থাকলেও বিদ্যমান নীতিমালাকে উপেক্ষা করে অবৈধ শর্ত আরোপের মাধ্যমে শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রেও তিনি সীমাহীন বৈষম্য করেছেন। এসবের সুরাহা করার তিনি ন্যূনতম কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না। গ্রেড-১ অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য দুইজন শিক্ষক প্রায় দুইবছর আগে আবেদন করেছেন, গ্রেড-২ অধ্যাপক পদে ৯ জন অধ্যাপক প্রায় দেড় বছর আগে আবেদন করেছেন। এতদিন কমিটি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের পদোন্নতির কোন উদ্যোগই গ্রহণ করেননি। এখন মাননীয় উপাচার্য বলছেন কমিটি করেছেন। আমাদের প্রশ্ন এতদিন তিনি কি করেছেন? আর যদি নতুন করে কমিটি করে থাকেন তাহলে এগুলোর পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয়া তো এক সপ্তাহের ব্যাপার!

spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর