কর্মসংস্থান যে কোনো দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে দেশে বেকারত্ব বেড়ে যায় এবং বলা হয় বেকারত্ব সমাজের অভিশাপ। একটি রাষ্ট্রের পক্ষে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন আত্মকর্মসংস্থান।
মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার। এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। স্বাদ, পুষ্টি ও ঔষধিগুণের কারণে ইতোমধ্যেই এটি ধনবাড়ী সহ সারা দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে আমাদের ধনবাড়ীতে বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ যুবকরা মাশরুম চাষ করছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গৃহিণীরাও চাষ করছেন। অর্থাৎ আমাদের ধনবাড়ীতে ঘরোয়াভাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। মাশরুম চাষ ধনবাড়ী’র বেকার সমস্যা সমাধান করতে পারে।
এটি ঘরের ফসল, চাষের জন্য কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয়না। যার মোটেই চাষের জমি নাই তিনিও বসত ঘরের পাশের অব্যবহৃত জায়গায় অথবা ঘরের উত্তর পাশের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করতে পারে। বীজ উৎপাদনের জন্য যেসব কাঁচামালের প্রয়োজন হয় যেমন- খড়, কাঠের গুঁড়া, কাগজ, গমের ভুসি ইত্যাদি তা সহজলভ্য ও সস্তা। এদেশের আবহাওয়াও মাশরুম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ মাশরুম চাষ করতে পারবে। পারিবারিক শ্রমকে কাজে লাগানো যায়। স্বল্প পুঁজি ও শ্রম ব্যয় করে অধিক আয় করা সম্ভব।
মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় ধনবাড়ী উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারটি মাশরুম চাষের সাব সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় মাশরুম চাষ সম্প্রসারণে ধনবাড়ী তথা উত্তর টাঙ্গাইলের জন্য এটি রিসোর্স সেন্টার হিসেবে কাজ করবে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় ধনবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার হতে মাশরুম চাষে আগ্রহী চাষীদেরকে মাশরুম চাষ, বিপনন ও ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হবে এবং উদ্যোক্তাদেরকে মাদার কালচার সরবরাহ করা হবে।
মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সাপোর্টের জন্য প্রাথমিকভাবে ধনবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টারটি সাবসেন্টার হিসেবে কাজ করবে । ‘মাশরুমের গুরুত্ব ও মাশরুম উৎপাদন কৌশল’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে একজন ব্যক্তি মাশরুম চাষ, স্পন উৎপাদন, মাশরুম বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে পারবে।
প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর প্রয়োজন পুঁজি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দৈনিক কী পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করবে এবং স্পন উৎপাদন করবে। এরপর স্থান নির্বাচন, প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ, যন্ত্রপাতি ক্রয় ইত্যাদি।
প্রাথমিকভাবে ৫,০০০-৫০,০০০/- মাশরুম চাষ শুরু করা সম্ভব। বীজ উৎপাদনের জন্য মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক ড. নিরদ চন্দ্র সরকার উদ্ভাবিত স্টেরিলাইজেশন কাম ইনোকুলেশন চেম্বার ব্যবহার করলে লাগে মাত্র ৮০০০/-। যন্ত্রটি ব্যহারের সুবিধা হলো একইসাথে বীজ/সাবস্ট্রেট জীবাণুমুক্তকরণ এবং বীজ প্রতিস্থাপন/ ইনোকুলেশন করা যায় অর্থাৎ আটোক্লেভ ও ক্লিনবেঞ্চের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
মাশরুম চাষের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি বর্তমানে ব্যবহার করা হয় তাতে কোনো প্রকার ঝুঁকি নেই। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের উদ্ভাবিত পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতিতে স্পন উৎপাদন করলে কন্টামিনেশন নেই বলে ঝুঁকি কম। এছাড়া এটি যেহেতু ঘরের ফসল সেকারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুক্ত।
ধনবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে স্টেরিলাইজেশন কাম ইনোকুলেশন চেম্বার ব্যবহার করে একজন মানুষ সহজেই স্পন প্যাকেট উৎপাদন করতে পারে। নিজের বীজ নিজে উৎপাদন করলে মাশরুম উৎপাদন খরচ কমে যাবে।
পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতিতে স্পন প্যাকেট উৎপাদন করলে মাইসেলিয়াম দ্বারা পরিপূর্ণ হতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে। এছাড়া জাতভেদে স্পন প্যাকেট কর্তনের ৩-৭ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায় বিধায় বিনিয়োগকৃত অর্থ অল্প সময়ে তুলে আনা সম্ভব। বিভিন্ন হোটেলে মাশরুমের চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় কাঁচাবাজার, ফ্রাইশপ, গলির মোড়, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি জায়গায় বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। মাশরুম শুকিয়ে দূর-দূরান্তে বিক্রি করা সম্ভব এমনকি বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
উদ্যানতত্ত্ববিদ মোঃ রাসেল পারভেজ তমাল বলেন, ধনবাড়ী হটিকাচার সেন্টার থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে যে কেউ শুরু করতে পারেন এই মাশরুম চাষ। আর ঘরে বসে আয় করতে পারেন বাড়তি কিছু টাকা। একজন মানুষ যেকোনো কাজের বা চাকরির পাশাপাশি মাশরুম চাষকরে বাড়তি কিছু আয় করতে পারবে। আবার মাশরুমই হতে পারে তার বাঁচার/আয়ের একমাত্র উৎস। এভাবে দেশের অনেকেই মাশরুম চাষ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন।
সম্প্রতি ধনবাড়ী উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হারুনার রশিদ হীরা এর নেতৃত্বে ধনবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টারের মাশরুম উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের নীরিক্ষা অনুবিভাগের যুগ্মসচিব জনাব আলী আকবর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অর্থ ও প্রশাসন উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ জয়নাল আবেদীন, মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ড. আখতার জাহান কাঁকন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ধনবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টারে দায়িত্বরত উদ্যানতত্ত্ববিদ জনাব মোঃ রাসেল পারভেজ তমাল এবং উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তাবৃন্দ।