ঢাকা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২:০২ পূর্বাহ্ণ
জাতীয়দেশের ১২ জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি

দেশের ১২ জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি

spot_img

কাঠফাটা রোদে তপ্ত চারপাশ। তাপমাত্রার এ পারদ প্রতিদিনই চড়ছে। তাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অস্বস্তিকর গরমে ঘর ছেড়ে বেরোনোই দায়! শনিবার (২০ এপ্রিল) দেশের ১২টি জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি ছিল। এর মধ্যে যশোর, চুয়াডাঙ্গাসহ তিন এলাকায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি বা তার বেশি ছিল। তবে সহসাই এই তাপদাহ থেকে মুক্তি মিলবে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাদের ভাষ্য, আগামী ১০ দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে দেশে এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এদিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। এদিন এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শুধু এই তিন জেলাই নয়, গতকাল দেশের ১২টি জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি ছিল। এর মধ্যে যশোর, চুয়াডাঙ্গাসহ তিন এলাকায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি বা তার বেশি ছিল। অপর এলাকাটি হলো পাবনার ঈশ্বরদী। এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাটের মোংলায় ও কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। আর ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা ছিল ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তা তীব্র তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।

এদিকে চলমান এই তীব্র গরম থেকে এখনই পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারা বলছে, এই তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন চলবে। উইন্ডি বলছে, আগামী ১০ দিন দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম।

একই সঙ্গে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তাও (হিট অ্যালার্ট) রোববার (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে। গতকাল ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে অধিদপ্তর বলেছে, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের কিছু জেলা এবং বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ প্রবাহিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, চলমান তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। জারি করা হিট অ্যালার্টেও আপাতত কোনো পরিবর্তন আসছে না। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী চেক প্রজাতন্ত্রভিত্তিক ওয়েবসাইট উইন্ডির তথ্য বলছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তানের একাংশ, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকবে। বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় কোনো মেঘমালা গতকাল পর্যন্ত ছিল না। আগামী মঙ্গলবার থেকে বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর ও আন্দামান সাগরে মেঘমালা তৈরি হতে শুরু করবে। ১০ দিন পর গিয়ে সেই মেঘমালা উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করবে। তার আগে ভারী বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।

অন্যদিকে টানা তীব্র গরমে ও তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষতির ঝুঁকিতে ধানসহ মাঠের ফসল। কাজ কম থাকায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। চুয়াডাঙ্গা শহরের গৃহিণী তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘গরমে ট্যাংকের পানিও গরম হয়ে গেছে।’ মেহেরপুরের গাংনী শহরের অটোরিকশাচালক মো. আরেফিন ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত গরমে যাত্রী পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। মানুষ খুব একটা বের হচ্ছে না।

তীব্র গরমে ফল-ফসলের ক্ষতি থেকে বাঁচতে বিশেষ যত্ন নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, যেসব অঞ্চলে (পাহাড়ি ও বরেন্দ্র) তীব্র পানির সংকট ও তাপপ্রবাহ, সেখানে গাছে সকালে অথবা বিকেলে পানি স্প্রে করা যেতে পারে। মাটির বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ফলন্ত গাছে ৭-১০ দিন অন্তর সেচ দিতে হবে। না হলে আম, লিচু, কাঁঠাল এ সময় তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঝরে পড়বে। প্রয়োজন অনুযায়ী সারও দিতে হবে।

spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর