চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে দাফনের প্রায় ৬ মাস পর স্বামীসহ ববি খাতুন (২৬) নামে এক যুবতীর এলাকায় আগমন ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে ফিরেন তিনি।
ববি খাতুন শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের খড়িয়াল-চৌকা গ্রামের গোলাম রসুলের মেয়ে। তার স্বামী মাজেদ আলী নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার বাসিন্দা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের লিলিখিলি মোড়ের একটি পুকুর থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর বস্তাবন্দী অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মৃত নারীর সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার দেখে মরদেহটি ববির বলে চিহ্নিত করে তার পরিবার। পরবর্তীতে পুলিশ ফকিরপাড়া কবরস্থানে মরদেহটি দাফন করে। এ ঘটনায় সদর থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
পরবর্তীতে এই মামলায় শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ক্যাপড়াটোলার এনামুল হকের ছেলে রুবেল আলী নামের এক যুবককে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
৪০ দিন জেল হাজতে থাকার পরে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরেন রুবেল। এ মামলায় ফাহিম ও বিপ্লব নামে আরও দুইজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়।
তবে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই মামলার কার্যক্রম এখনো চলমান। এ অবস্থায় ববি এলাকায় ফিরে আসায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জরজেস আলী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এলাকাবাসী জানে ববি খাতুন মারা গেছে। এ ঘটনায় একজন জেলও খেটেছে। হঠাৎ গত বুধবার ববি খাতুন তার স্বামী নিয়ে গ্রামে ফিরছে। জীবিত অবস্থায় ববিকে দেখে সবাই অবাক।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কাজল আহমেদ বলেন, ববি অনেক দিন পরে বাড়িতে ফিরেছে। তার পরিবার এতদিন দাবি করেছিল, সে মারা গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রুবেলের পরিবারের সদস্যরা জানান, টাকা নিয়ে ফাহিম নামের স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে বিবাদে জড়ায় রুবেল। একপর্যায়ে ওই যুবকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় রুবেল।
পরে ফাহিমকে স্বামী দাবি করে সেই ফোন ফেরত পেতে রুবেলের মুঠোফোনে কল দেয় ববি। পরবর্তীতে ববিকে ফোনটি দিয়ে আসে রুবেল। ওই দিন রাতেই নিখোঁজ হয় ববি। তার কয়েকদিন পরে এক নারীর বস্তাবন্দী অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ববির পরিবার মরদেহটি তার মেয়ের বলে শনাক্ত করে। এ ঘটনায় মামলা হলে ববির কল লিস্ট দেখে রুবেলকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
রুবেল বলেন, ববি নিখোঁজ হওয়ার পরে অভিযোগ করা হয়, আমি নাকি গুম করেছি। তিনদিন পরে সদর উপজেলার একটি পুকুর থেকে বস্তাবন্দী অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তিনি বলেন, মরদেহটি ববির বলে শনাক্ত করে তার পরিবার। পরে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ৪০ দিন জেল হাজতে থাকার পরে এখন জামিনে মুক্ত আছি। কিন্তু মামলা এখনো চলছে।
রুবেল আরও বলেন, আমি কোনো অপরাধ না করেও এতদিন জেল হাজতে থাকতে হয়েছে। অনেক টাকা নষ্ট হয়েছে। বুধবার শুনতে পাই, ববি বাড়ি ফিরেছে। এই খবরে স্বস্তি পেয়েছি। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে।
তবে, ববি খাতুন অভিযোগ করে বলেন, রুবেল ও তার সহযোগীরা আমাকে বাড়ি থেকে মুঠোফোন মনাকষা এলাকায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে গোমস্তাপুরে নিয়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে নওগাঁয় আমাকে ফেলে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসী অচেতন অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে। পরে সেখানের এক যুবকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরে তাকে বিয়ে করে এতদিন ঢাকায় ছিলাম। এসময় তাকে প্রশ্ন করা হয়, বাড়িতে কেন যোগাযোগ করেননি? তবে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি দেননি।
ববির বাড়ি আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু রহমান বলেন, পুলিশ বস্তাবন্দী মরদেহটি উদ্ধার করলে ববির পরিবার দাবি করে, মরদেহটি তাদের মেয়ের। পরে পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে দুইজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার করা হয় রুবেল নামের একজনকে। সে এখন জামিনে আছে।
ঘটনার সময় তিনি এই থানায় কর্মরত ছিলেন না জানিয়ে ওসি আরও বলেন, মামলাটির তদন্ত এখনো চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া, ৬ মাস আগে বস্তাবন্দী যে নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার পরিচয় শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে।