হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন হয়েছে। শনিবার বেলা ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ টার্মিনাল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দেশের আকাশপথে সম্ভাবনার নবদিগন্ত উন্মোচিত হলো।
চোখ ধাঁধানো স্থাপত্যশৈলী। সর্বত্রই অত্যাধুনিকতার ছোঁয়া। বিশাল এলাকাজুড়ে দৃষ্টিনন্দন ভবন। নানা রঙের আলোর ঝলকানি যেন রাজধানীর কুর্মিটোলাজুড়েই। দেশ এগিয়ে যাওয়ার স্মারক হিসেবে এখন চোখের সামনে স্বপ্নের বাস্তবতা। রাজধানী ঢাকার বুকে এ বিস্ময়কর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম কোনো বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের সেবা মিলবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অটোমেশনের ব্যবস্থাসহ ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার পরিসরের এ টার্মিনালের অত্যাধুনিক সব ধরনের সেবায় স্বস্তিবোধ করবেন যাত্রীরা।
সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে, আধুনিক সরঞ্জাম, স্বয়ংক্রিয় সেবা ও চোখ আটকে থাকা নকশা এরইমধ্যে আকৃষ্ট করেছে বিশ্বের নামিদামি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে। লক্ষ্য পূরণে বাড়বে যাত্রী সংখ্যাও। উন্নত সেবার বিপরীতে কয়েকগুণ আয় বৃদ্ধির সম্ভবনা রয়েছে। নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা আস্থার যোগান দেবে বিদেশিদের।
সংস্থাটি আরো জানায়, নতুন টার্মিনাল নির্মাণের পর সুইস এয়ার, এয়ার কানাডা, এয়ার ফ্রান্সসহ অন্তত ১৫টি নতুন বিদেশি এয়ারলাইনস এরই মধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এ স্থাপনা বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন সংযোজন। এর ফলে ভারী হবে বিনিয়োগের পাল্লাও।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, দেশের প্রধান বিমানবন্দরের পুরোনো দুটি টার্মিনালের আয়তন ১ লাখ বর্গমিটার। আর তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারজুড়ে। নতুন এই টার্মিনালে একসঙ্গে পার্ক করা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ, পুরোনো দুটিতে করা যায় ২৯টি। থাকছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ এয়ারবাস এ-৩৮০ এর উপযোগী দুইটিসহ মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ। প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ উদ্বোধনের পর করা হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের দিকে টার্মিনাল ব্যবহারের সুযোগ পাবেন যাত্রীরা।
নতুন এ টার্মিনালে রয়েছে অত্যাধুনিক ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট। স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ সুবিধাসহ বহির্গমন ও আগমনী ইমিগ্রেশন কাউন্টার ১২৮টি। নিরাপত্তা নিশ্চিতে থাকবে ৪০টি কেবিন এক্সরে মেশিন, ২৭টি ব্যাগেজ ও ১১টি বডি স্ক্যানার। বহির্গমনের জন্য সেলফ চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট কাউন্টার ১১৫টি। ১৪টি স্পটে থাকবে ডিউটি ফ্রি শপ, সুপরিসর লাউঞ্জ ও বাণিজ্যিক স্পেস।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে উড়োজাহাজ ও রানওয়েতে চলমান যানবহানের অবস্থান নির্ভুলভাবে নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণের সুবিধা রাখা হয়েছে। বহুতল পার্কিংয়ে একসঙ্গে রাখা যাবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি। পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য কার্গো টার্মিনালের আয়তন ৩৩ হাজার বর্গমিটার। যেখানে পুরো প্রক্রিয়া চলবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, অটোমেটিক চেক হবে চারটি লেয়ারে। এখানে যাত্রীর ব্যাগ দেখার জন্য খোলা লাগবে না। যদি কোনো সন্দেহ হয় তাহলে চার লেভেলে ব্যাগগুলো স্ক্যান হবে।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর মাসে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। সে সময় এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরও ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের আকার দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির নির্মাণ শুরু হয়। প্রকল্পটির নির্মাণব্যয়ের বেশির ভাগ আসছে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে। সংস্থাটি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর বাকি ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
শাহজালালের থার্ড টার্মিনালটির ভবন হবে তিনতলা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় এর নির্মাণকাজ। জাপানের মিত্সুবিশি ও ফুজিটা এবং কোরিয়ার স্যামসাং এ