ঢাকা | শনিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০:১২ অপরাহ্ণ
রাজনীতিতরুণদের দিয়ে ভারতকে কড়া সতর্ক বার্তা বিএনপির

আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ

তরুণদের দিয়ে ভারতকে কড়া সতর্ক বার্তা বিএনপির

spot_img

তরুণ তিন সংগঠন দিয়ে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কড়া সতর্ক বার্তা দিয়েছে বিএনপি। ঢাকা থেকে লংমার্চ করে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে লাখো তরুণের সমাবেশের মধ্যে দিয়ে এ বার্তা দেয় দলটি। এসময় ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মধ্যদিয়ে ভাতের আধিপত্যকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তরুণ নেতারা। তারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেয়নি, ভারতের প্রভুত্বও মেনে নেয়নি এবং আগামী দিনেরও মেনে নেবে না।

বুধবার ভারতের আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ করে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এ লংমার্চ করছে সংগঠন তিনটি। এদিন সকাল ৯ টায় রাজধানীর নায়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে থেকে লংমার্চ শুরু হয়। লংমার্চ শুরুর আগে নয়াপল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ন-মহাসচিব রুহুল কবির। আখাউড়া সীমান্তে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে লং মার্চ শেষ হয়।

লংমার্চের গাড়ি বহর ঢাকা থেকে বের হওয়ার পর সড়কের দু’পাশে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল। তারা হাত নেড়ে, ফুল ছিটিয়ে গাড়ি বহরকে স্বাগত জানান। খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, সিলেট, ভৈরব, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং আখাউড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা গাড়ি ও মোটর বাইক বহর নিয়ে লংমার্চে অংশগ্রহণ করেন। তারা জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং ফেস্টুন নিয়ে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। এসময়, দিল্লি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা, ভারতের দালালেরা- হুঁশিয়ার সাবধান’সহ ভারতবিরোধী নানা স্লোগান দেন তারা। লংমার্চে নেতাকর্মীদের হাতে নানা স্লোগান সংবলিত ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উড়াতে দেখা গেছে।

কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেখানে উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, এই স্বাধীনতা আমরা বিক্রি করে দেবো? আমরা পিন্ডির কাছে থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, এটা দিল্লির কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করবো, এই রক্ত আমাদের নেই। তিনি বলেন, আজকে দিল্লির যারা সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী তারা মনে রেখো, তোমরা একজন ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু লেডি ফেরাউনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন দিয়েছিলে। আজকে ভারতের শাসকগোষ্ঠী গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে সমালোচিত। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। ওরা (ভারত) বাংলাদেশের মানুষের রক্তের যে তেজ, আত্মশক্তি, বিরত্ব- এটা দিল্লীর শাসকরা বুঝতে পারেনি।

বেলা সাড়ে ১২টায় ভৈরব পৌঁছায় লং মার্চ। সেখানে সংক্ষিপ্ত পথ সভা করে। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা লংমার্চ করছি। ভারত নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণআন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, তার সকল দোসরদের আশ্রয় দিয়েছে। আপনাদের (ভারত) জানিয়ে দিতে চাই-এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ না। এই বাংলাদেশ সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার ও তারেক রহমানের বাংলাদেশের। এদেশের এক ইঞ্চির মাটির দিকে তাকালে সেই চোখ উপরে ফেলা হবে।

ভারতের বিভিন্ন কর্মকন্ডের সমালোচনা করে জিলানী বলেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধু না। বিশেষ করে সেখানে শেখ হাসিনা থাকে, বাংলাদেশের শত্রু থাকে সেই ভারত বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না।

সভায় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ পাশাপাশি রাষ্ট্র। আমরা বলেছি, ভারত বন্ধু রাষ্ট্র। কিন্তু সেখানে আমাদের হাইকমিশনার হামলা হয়েছে, পতাকা পুড়িয়েছে। সীমন্তে আমাদের দেশের নাগরিকদের গুলি করে মারছে, ফেলানিকে হত্যা করে কাঁটাতারের ঝুঁলিয়ে রাখে। এটা কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না।

তিনি বলেন, ভারত একটি আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র। ভারতের আশির্বাদে এদেশে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিতি হয়েছিলো। এখন হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ভৈরব থেকে লংমার্চ নিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় আখাউড়া সীমান্তে পৌঁছান নেতাকর্মীরা। ভারতে বাংলাদেশি হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননা ও ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারের প্রচারের প্রতিবাদে এদিন আগরতলা অভিমূখে ঢাকা- আখাউড়া লংমার্চ করে বিএনপি তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এতে লাখো নেতাকর্মীর ঢল নামে। আখাউড়া স্থলবন্দরের ট্রাক স্ট্যান্ডে সমাবেশ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।

বিকাল সোয়া চারটার দিকে সমাবেশ শুরু হয়ে বিকেল ৫টায় শেষ হয়। আগরতলা সীমান্ত থেকে ১০০ মিটার দূরে স্থলবন্দর মাঠে এই সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত স্বাধীন চেতা জাতি। আমরা বাংলাদেশের ভূখন্ডের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা সজাগ। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব ভারতের। তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে হবে। আমাদের কোন প্রভু নেই। আমরা ভারতকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখি। আর শেখ হাসিনা সরকারকে ভারত আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আপনারা ভারতকে বলেন, শেখ হাসিনাসহ তাদের দোসরদের ফিরিয়ে দিতে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, দাসত্ব নয়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য জীবনকে বাজি রাখতে হবে। প্রয়োজনে দেশের সম্মান রক্ষায় আবারও রক্ত দেবো। তবুও দিল্লির দাসত্ব মানবে না এদেশের জনগণ।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, এই লংমার্চ সফল হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে এই লংমার্চ শুরু হয়েছে। এরমাধ্যমে ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি, শেখ হাসিনা আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম ও খুন করা হয়েছে। সুতরাং যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেনো, তা সফল হবে না।

লংমার্চে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, যুবদল সিনিয়র সহ সভাপতি রেজাউল করিম পল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সাংগঠনিক কামরুজ্জামান জুয়েল, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তিন সংগঠনের লাখো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর