ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর তোপের মুখে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসিরা গণপদত্যাগ করেন। বর্তমানে ৪০টির বেশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকহীন। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগে তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার।
শিগগিরিই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নিয়োগ একসঙ্গে দেওয়া হবে। এজন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আমলনামা নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ , ভিসি নিয়োগে সংক্রান্ত পাঁচ সদস্যে কমিটি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র বলছে, ভিসি নিয়ে তদবির অতিষ্ঠ শিক্ষা প্রশাসন। গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষক নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে ভিসি নিয়োগের জন্য তদবির আসছে। সেই তদবির এড়াতে গত কয়েকদিন সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এড়িয়ে চলছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। রোববার সকাল থেকে আগারগাঁও পরিকল্পনা কমিশনের আগ্রহী প্রার্থীদের আমলনামা নিয়ে বসেছেন তিনি। সেখানে ভিসি নিয়োগের জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
কমিটির সদস্য ও উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন সদস্য বলেন, ভিসিশূন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হবে। এজন্য আজ পরিকল্পনা কমিশনের উপদেষ্টা স্যারের সঙ্গে বসেছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করতে পারবো। তিনি জানান, এবার ভিসি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়ে চেয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক দক্ষতাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
ভিসি শূন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে সব ভিসি নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শনিবার ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশে ৫০টির বেশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টির বেশি এখন অভিভাবকহীন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শুধু উপাচার্যের পদ খালি আছে, তা নয়। প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষসহ অনেক প্রশাসনিক পদ খালি পড়ে আছে। আগে এই পদগুলো এতটাই দলীয়করণ করা হয়েছে, শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, প্রশাসনিক দক্ষতা আছে, বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে যোগ্য—এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর মানে এই এই নয় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চমানের গবেষক-শিক্ষক নেই। দলীয় সংস্কৃতির কারণে যোগ্য অনেকে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন; কিন্তু তারা আবার বৃহত্তর শিক্ষক সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, এটাও একটা সমস্যা। এসব শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে যোগ্যদের খুঁজে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে বলে উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে শত শত সুপারিশ আসছে নানা দিক থেকে। আমি আমার মতো যোগ্য, যাদের পদায়ন করা যায়, বিভিন্নভাবে খোঁজার চেষ্টা করছি। আশা করি অচিরেই আমরা অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিতে পারব।
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদে যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী না ভাবার জন্য অন্য শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানাই। যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববেন না।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে যে যেসব উপাচার্যকে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে সেখানে কিন্তু প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজেদের একটা নিয়ম আছে, সিনেটের মাধ্যমে এবং নানা প্রক্রিয়ায় উপাচার্য নিয়োগ হন। এই পদ্ধতি তো চালু থাকবেই। প্রশ্ন উঠতে পারে, এখন আমরা নিয়োগ দিচ্ছি কীভাবে? আসলে পুরো পদ্ধতি গ্রহণেরও তো সময় নেই। আমাদের তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালু করতে হবে। কাজেই এটা সাময়িকভাবে নিয়োগগুলো দিতে হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে নিশ্চয়ই নিয়মানুগভাবে সব কিছু হবে। এখন তো পুরো প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সুযোগ নেই।