গত কয়েক দিন ধরে চলমান তাপদাহের মধ্যেই দেশের কয়েকটি অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হয়েছে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। আর হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এছাড়াও ঝড়ে গাছপালা ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ফসলের ক্ষেত। মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা।
রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকেই হঠাৎ করেই শুরু হয় দমকা হাওয়াসহ ঝড়। সঙ্গে চলে বজ্রসহ বৃষ্টি। কয়েক মিনিট স্থায়ী ঝড় বৃষ্টিতে পিরোজপুর , ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বাগেরহাটে সাত জনের মৃত্যু হয়।
এ দিন সকাল ১০টা দিকে পিরোজপুর সদরে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। আকস্মিক ঝড় ও তীব্র বাতাসের বড় গাছ ভেঙে পড়ে ইউপি সদস্য হারুন শেখের বাড়ির ওপর। এতে দুইতলা টিনের বাড়ি মাঝ বরাবর ধসে যায়। এতে গাছের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন রুবি বেগম।
পটুয়াখালীতে কালবৈশাখী ও বজ্র ঝড়ে দু’জন নিহতসহ বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের তাতেরকাঠী গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন নবম শ্রেণীর ছাত্র রাতুল। দাসপাড়া ইউনিয়নের বাহের দাসপাড়া গ্রামে গাছ চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন বৃদ্ধা সাফিয়া বেগম।
ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ের সময় মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারান কাঁঠালিয়া উপজেলার গৃহবধু হেলেনা বেগম, সদর উপজেলার পোনাবালিয়া এলাকার ঈষানা ও শেখেরহাট গ্রামের গৃহবধূ মিনারা বেগম।
বাগেরহাটে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত ও অসংখ্য ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় কচুয়া উপজেলার মঘিয়ায় বজ্রপাতে নিহত হন লিকচান সরদার (৩৫) নামে এক কৃষক।
এদিকে ঝড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ। গাছপালা ভেঙে পড়ে পিরোজপুরের সঙ্গে বরিশালের সড়কসহ বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে হঠাৎ চতুর্দিকে কালো মেঘ ঢেকে যায়। কিছু সময় পর তীব্র বেগে ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে কয়েকশ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ঝড়ে অনেকের কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে টিনের চালা উড়ে যায়। ধানক্ষেতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। সড়ক-ঘরবাড়ির ওপর গাছপালা ভেঙে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত রুবি নামের একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আরও কয়েক জায়গায় বৃষ্টিরে সঙ্গে বয়ে গেছে দমকা হাওয়া। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিলো। হঠাৎ করে শুরু হয় ঝড়। ঝড়ে অনেক জায়গায় গাছ পড়ে বরিশাল-পিরোজপুর সড়কে ব্যাহত হয় যানবাহন চলাচল। পরে রাস্তার ওপর থেকে গাছ সরানোর কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা।
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আগে জানানো হয়েছিলো, রোববার রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও হতে পারে শিলাবৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি কমে আসতে পারে। তবে এপ্রিল মাস জুড়েই তাপপ্রবাহ চলবে এবং এবারের ঈদে সময় অন্যবারের তুলনায় গরম বেশি থাকবে বলেও আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
আরও বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বাড়তি অংশ হিমালয় পাদদেশের পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ফলে পাবনা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, যশোর, খুলনা, ফরিদপুরসহ ১২ জেলার ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।