সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে থাকা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মো. মাকসুদ আলম। জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার (২০ মার্চ) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। পাশাপাশি জাহাজে থাকা জলদস্যুর এক সদস্যের সঙ্গেও প্রাথমিক যোগাযোগ হয়েছে।
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জিম্মি হওয়ার আটদিন পেরিয়ে গেছে। জিম্মি নাবিকদের মুক্তি ঠিক কতদিনে সম্ভব সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অব্যাহত চাপের মুখে পড়ে সোমালিয়ান জলদস্যুরা বাংলাদেশি জিম্মি জাহাজটিকে নিজেদের উপকূলের আরও কাছে সরিয়ে নিয়েছে। এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি এখন তীরের মাত্র দেড় মাইল দূরে নোঙর করা আছে। তবে দস্যুরা হুমকি দিয়ে রেখেছে, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী ‘বাড়াবাড়ি’ করলে জাহাজটিকে তীরে তুলে দেবে তারা।
জিম্মি নাবিকদের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছেন মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান। জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ার পর থেকে নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের পরিস্থিতি সবাইকে জানিয়ে আসছেন এই ক্যাপ্টেন।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান জিম্মি নাবিকদের বরাতে বলেন, কদিন জাহাজের খাবার খাওয়ার পর জলদস্যুদের অধিকাংশই আবার নিজেদের জন্য স্থানীয় খাবার আনা-নেওয়া শুরু করেছে। এতে জাহাজের খাবার হয়তো কয়েকদিন বেশি যেতে পারে। আর জাহাজের নাবিকরাও খাবার সাশ্রয়ের জন্য রাতের খাবার (ডিনার) বাদ দিয়েছেন। এখন মূলত ইফতার আর সেহরি তৈরি হচ্ছে সবার জন্য। এছাড়া সচরাচর জাহাজে যেভাবে একাধিক তরকারি রান্না হতো, সেটিও পরিহার করা হচ্ছে।
জাহাজের কার্গো (কয়লা) হোল্ডের বর্তমান পরিবেশ নিরাপদ আছে বলেও জানিয়েছেন নাবিকরা। তবে তারা বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। বলেছেন, নৌবাহিনীর চাপের ফলে সব নাবিককে এখন দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই ব্রিজে রাখছে দস্যুরা। এছাড়া মাঝেমধ্যে ভিএইচএফ (ওয়াকি টকি) ব্যবহার করে নৌবাহিনীকে অনুরোধও জানাতে হচ্ছে যেন কাছে না আসে। পানি রেশনিং এবং সবসময় ব্রিজে অবস্থান করায় সবার পক্ষে নিয়মিত গোসল করা আর কাপড় ধোঁয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কারো কারো ত্বকে চর্মরোগ দেখা দিয়েছ। আর ব্রিজে শৌচাগার মাত্র একটি। এক শৌচাগার ২৩ জন নাবিক ছাড়াও ২৫-৩০ জন জলদস্যু ব্যবহার করছে। তাদের ওজনের কারণে কমোডের সিট ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে। তাছাড়া তারা খুব অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ায় বাথরুমও পরিষ্কার করে না। যার ফলে এই বাথরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা আর ব্যবহার করা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।