রবিউল আজিম তনু ও আরএস ফাহিম চৌধুরী
ছাদ খোলা প্রাইভেট কারে চড়ে সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ইলিয়ট ব্রিজে ভিডিও করার সময় লোহার পাইপের সঙ্গে আঘাত লেগে নিহত রবিউল আজিম তনু (২৫) জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর আরএস ফাহিম চৌধুরীর টিমের সদস্য বলে জানা গেছে। শনিবার (৮ জুন) ভোর ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রবিউল আজিম তনু সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার গোপিনাথপুর গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে।
এদিকে আজিমের মৃত্যুতে শোকাহত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আরএস ফাহিম চৌধুরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি পোস্ট করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘শনিবার ভোর ৫টা ৩০মিনিটের দিকে আমাদের আজিম দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। কীভাবে বর্ণনা করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। বার বার মনে হচ্ছে সব কিছু কেমন জানি একটি দুঃস্বপ্নের মতো। কিন্তু কীভাবে নিজেকে বুঝাবো যে ভাইটি আর নেই। চোখের সামনে সব দেখেছি ভাই, যা কোনো দিনও বুঝাতে পারবো না। তাই সংক্ষেপে একটু বর্ণনা করি। আমরা ঠিক ফজরের আজানের সময় সিরাজগঞ্জ কড্ডার মোড়ে পৌঁছাই, সেখান থেকে হালকা কিছু খাবার খাই সবাই মিলে, এরপর আমরা ক্রস বাঁধ ৩ এ যাই। সেখানে আজিম তার মতো করে শুট নিতে ব্যস্ত ছিলো ভ্লগের জন্য তারপর কিছু সময় কাটাই সেখানে। এরপর আমরা রওনা হই হোটেলে যাওয়ার উদ্দেশে। যাওয়ার পথে সে সামনের একটি গাড়িতে ওঠে সানরুফ দিয়ে বের হয়ে শুট নিচ্ছিল। এর মধ্যে এসএস রোড দিয়ে বড়পোল পার হওয়ার সময় ওপরে থাকা লোহার যে বারটি রয়েছে (হেইট বার), সানরুফে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে মাথায় এবং বুকে সজোরে আঘাত হানে। উল্টো হয়ে ফিরে থাকার কারণে সেও বুঝতে পারেনি। যার কারণে আঘাতটা সরাসরি তার মাথার পেছন দিকে লাগে। মাথার পিছে আঘাত লাগার ফলে তাৎক্ষণাৎ সে সেখানে গাড়ির ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে।
আরএস ফাহিম চৌধুরী আরও লিখেছেন, ‘২-৩ মিনিটের মধ্যে আমরা সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল পৌঁছাই। সেখানে নেওয়ার আগেই আমাদের ভাই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে তার জন্য কিছু করার সুযোগটাও পায়নি। চোখের পলকে সব শেষ হয়ে গেল। চিরদিন দায়ী থেকে যাব। দুই মাস আগে ও বাবা হারা হয়েছে। এই ছেলেটির চলে যাওয়া তার মাকে জানানোর মতো কষ্ট কখনো বুঝাতে পারব না। দূর থেকে অনেকে অনেক মতামতই করবে। কিন্তু সব নিজ চোখের সামনে হয়েছে ১০০০ কথা লিখেও কাউকে বুঝাতে পারব না। আমরা সকাল থেকে হাসপাতাল এবং প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম শেষ করে লাশ নিয়ে এখন সাতক্ষীরার পথে। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন এবং ওর আত্মার মাগফেরাত কামনা করবেন।’
সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জ শহরের এসএস রোড এলাকার বন্ধু মঈনুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে রবিউল আজিম তনু ও অপর এক বন্ধু ভোরে একটি প্রাইভেট কার নিয়ে ইলিয়ট ব্রিজের ওপরে যান। তিনি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। গাড়ির ছাদ খুলে দাঁড়িয়ে ব্রিজের ভিডিও করছিলেন। হঠাৎ তিনি ব্রিজের লোহার পাইপের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হন। বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।