‘আমার ঘরের কিছুই বাঁচাতে পারিনি। আগুনে পুড়ে সব শেষ। একেবারে পথে বসে গেলাম। নিঃস্ব হয়ে গেলাম। গায়ের কাপড়টা ছাড়া আর কিছুই নেই। এখন আমি কী করব’— কথাগুলো বলতে বলতে বিলাপ করে কাঁদছিলেন মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে সব হারানো শিমু আক্তার লাবণী।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এই বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে দুপুর ২টায় ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ফলে পুরোপুরি পুড়ে গেছে প্রায় আড়াইশ থেকে তিনশটির বেশি ঘর। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
শিমু আক্তার নামের ওই নারী বলেন, আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে। আমার এই বস্তিতে পাঁচটি ঘর ছিল। আগুন লাগার খবর শুনে তাড়াতাড়ি ছুটে এসেছি। এসে দেখি কিছুই নেই। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আমার সারা জীবনের কষ্ট দিয়ে গড়া সব জিনিসপত্র ও স্বর্ণের গয়না পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি পথের ফকির হয়ে গেছি। শুধু মুরগির দুটি খাঁচা বের করতে পেরেছি। আমার জীবনের সব আশা-ভরসা শেষ।
রবিউল ইসলাম নামে আরেক যুবক বলেন, হঠাৎ করে লাগা আগুন কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেও কিছু বাঁচাতে পারিনি। বস্তির পূর্ব অংশের কিছু কিছু ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করা সম্ভব হয়েছে। এখন এসব পোড়া অঙ্গারের নিচে সবাই খুঁজে বেড়াচ্ছি কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে কি না।
আগুনে সবকিছু হারিয়েছেন বৃদ্ধ মো. বসু মিয়া। তিনি বলেন, আমি নামাজে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে শুনি আগুন লেগেছে। তখন দৌড়ে এসে ঘরে ঢুকি। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে সব অন্ধকার হয়ে যায়। মানুষজন আমাকে টেনে বাইরে বের করে নিয়ে আসে। এখানে ঘরে আমার চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মতো জিনিসপত্র পুড়েছে। আমরা গরীব অসহায় মানুষ। সারা জীবনের যা ইনকাম ছিল, সবকিছুই এখানে ছিল। লুঙ্গি, গামছা আর মোবাইল ছাড়া আমার কাছে এখন এক টাকার সম্পত্তিও নেই।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর জোনের ডিসি জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, মিরপুর ১২ নম্বরের ঝিল পাড় বস্তিতে আমরা দুপুরে আগুন লাগার খবর পাই। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় থানাসহ আশপাশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এখানে আনা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে এনে তাদের কাজের সুযোগ করে দিয়েছি। দুপুর ২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অগ্নিকাণ্ডে কেউ আহত বা নিহত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সুন্দর রয়েছে। এরপরও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এরপরও তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে।