একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে (বিসিজি) স্মার্ট প্রযুক্তি, জাহাজ, হেলিকপ্টার দিয়ে সজ্জিত করে একটি আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করা হবে বলে জানিয়েছেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১০ মার্চ) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবাষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রসীমা আইন জাতির পিতাই প্রথম করেছিলেন। ’৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের পর দায়িত্বে আসা কোনো সরকারই কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। সমুদ্রে বাংলাদেশ নিজস্ব সীমানার মালিক হয়েছে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এটি সম্ভব করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
তিনি বলেন, নতুন দুটি জাহাজ ও হেলিকপ্টার যুক্ত হচ্ছে কোস্ট গার্ডে। যুক্ত হবে আধুনিক মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স সিস্টেম। অচিরেই ত্রিমাত্রিক বাহিনী হতে চলেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছিলেন শোষিত, বঞ্চিত, ক্ষুধার্ত, নিপীড়িত বাঙালির জীবন উন্নত করতে। সে লক্ষ্য নিয়ে তিনি দেশ স্বাধীন করেন। আমাদের দেশে বিশাল সমুদ্রসীমা তিনি নিশ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশে যেন নৌকাঘাটি হয় ৬ দফা তিনিই দাবি করেছিলেন। সমুদ্র সীমানা আইন জাতিসংঘ করেছিল ১৯৮২ সালে, আর জাতির পিতা করে ১৯৭৪ সালে, এটা বিশ্বের দৃষ্টান্ত ছিল।
সরকারপ্রধান বলেন, ১৫ আগস্টে জাতির পিতা হত্যা করার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, জিয়া সরকার, এরশাদ সরকার বা খালেদা জিয়ার সরকার কেউ কিন্তু সমুদ্র সীমায় আমাদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই। ৯৬ সালে সরকার গঠন করার পরই আমরা উদ্যোগ নেই। সমুদ্র সীমায় আমাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করি। পাঁচ বছর পরে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারি নাই। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত কেউ আর উদ্যোগ নেয়নি। ২০০৯ সালের সরকার গঠন করেই সমুদ্রসীমা আমাদের যে অধিকার তার নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করি। আল্লাহ রহমতে আমরা সেটা করতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকেই একটি ঠিকানা পাবে, উন্নত জীবন পাবে। সে লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে।
সমুদ্রসীমায় যে সম্পদ রয়েছে, তা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য ইতোমধ্যে সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনোমি ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংযোগস্থল হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে কোস্টগার্ডকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বানও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ভি-স্যাটনেট কমিউনিকেশন সিস্টেমের অন্তর্ভুক্তি, যা কোস্ট গার্ডকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং যোগাযোগ ও অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। ইতোমধ্যে আমি ২টি হেলিকপ্টার উইংয়সহ এভিয়েশন উইং গঠনের নীতিগত অনুমোদন প্রদান করেছি, যা সংযোজনের মাধ্যমে কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডে ৪টি অফশোর প্যাট্রল ভেসেলসহ বিভিন্ন আকারের ১৬টি জাহাজ ও ১৩৮টি বোট কোস্ট গার্ড বহরে সংযোজিত হয়েছে। গভীর সমুদ্রে কোস্ট গার্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য আজ কোস্ট গার্ডের নবসংযোজিত ভিস্যাটনেট সিস্টেম ও ঢাকা জোন, পূর্ব জোন এবং দক্ষিণ জোনের বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ৯টি প্রতিস্থাপক জাহাজ নির্মাণের লক্ষ্যে একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিস্যাট নেট কমিউনিকেশন সিস্টেমসহ ৫টি স্টেশন ও একটি আউটপোস্টের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বর্তমান ও সাবেক কোস্ট গার্ড সদস্যদের অবদান ও সাহসিকতার জন্য তাদের মাঝে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পদক, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক, রাষ্ট্রপতি কোস্ট গার্ড পদক এবং রাষ্ট্রপতি কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং কোস্ট গার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।