চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর মিরপুরের একটি শুটিংস্পটে দগ্ধ হন ছোট পর্দার অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। এ ঘটনার দীর্ঘ ৯ মাস কেটে গেলেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি।
জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আঁখির পরিবার থেকে অভিনয় শিল্পী সংঘে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু বিগত ৯ মাসেও এ ঘটনার সুষ্ঠু কোনো ন্যায়বিচার পাননি অভিনেত্রী। এমনকি অভিযুক্তদের কাছ থেকে কোনো জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে পারেনি অভিনয়শিল্পী সংঘ।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ আঁখি শুক্রবার তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেইসঙ্গে চোখে সাদা কাপড়ে প্যাঁচানো এক গুচ্ছ গোলাপ, যেখানে লেখা ‘ট্রাস্টথ এবং ব্যান্ডেজ দিয়ে মুখ বন্ধ করা এক ছবি পোস্ট করেছেন।
অভিনেত্রী স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘কাজের মানুষজনদের সাথে দেখা হলেই এখন ঘুরে ফিরে একটা প্রশ্ন আসছে- অভিযোগ করলাম না কেনো? অভিযোগ করলে আমি নাকি ন্যায়বিচার পেতাম। তাহলে আপনারা মেনে নিচ্ছেন অন্যায় অবশ্যই হয়েছে। শুধু বিচারটা হয় নাই।’
তদন্ত কমিটির কাজের কোনো অগ্রগতি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি বা শুটিং বাড়ির কাউকে সংগঠনে এনে আমার সঙ্গে হওয়া সেই অন্যায়ের কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তো দূরের কথা, জবাবদিহিতা তৈরি করতে পারেননি সেই কমিটি বা সংগঠন।
অনেকে আঁখির কাছে জানতে চাচ্ছেন তিনি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিনা। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী লিখেছেন, অতি এক্সাইটেড হয়ে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী জানতে চাচ্ছে আমি ক্ষতিপূরণ চাইলাম না কেনো? সংগঠন নাকি ব্যবস্থা নিতে পারতো। আমি কি একবারও বলেছি ক্ষতিপূরণ চাই? আমি কি একবারও বলেছি মামলা করতে চাই? আমার ক্ষতিপূরণ লাগলে আমি সংগঠন এর কাছে কেন যাবো? যাব তো কোর্টে, ২/১ কোটি টাকার মামলা করতাম, মামলা জেতার দরকার নাই, শুধু ১০ বছর মামলা টানলেই হতো।
আঁখি লিখেছেন, আমি বার বার বলেছি, ক্ষতিপূরণ না অন্যায় যেটা হয়েছে তার একটা দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা তৈরি করেন। যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকার আর কেউ যেন না হয়। আমার ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলেন তো ক্ষতিপূরণ দিয়ে আমার এ ক্ষতি পোষাতে পারবেন কেউ? এই ক্ষমতা কি এই সমাজের আছে? আমাকে এমন লোভী বানানোর অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের?
আঁখির অভিযোগ, ‘ঘটনার পরে একটা তো কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। গিল্ড আর ইকুইটি সেই কমিটি গঠন করে দিয়েছে। সংগঠন থেকে কমিটিকে কাজ বুঝাই দেওয়া হয়েছে না? কমিটি কি রিপোর্ট দিয়েছে? কই সেটা, দেখান? আজকে তো ৯ মাস। কোথায় সেই কমিটি? কমিটি হয়ে যাওয়ার পর কমিটির পেছনে কি আমার পরিবার সরকারি অফিসের মত বার বার গিয়ে ঘেন ঘেন করবে? নাকি সংগঠন সেই কমিটিকে ফলোআপ করবে? নিয়ম অনুযায়ী কমিটি কমিটির মত করে তার রিপোর্ট পেশ করবে।’
ওই কমিটিতে ইম্রাউল রাফাত, ই-মেইল হক, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, মাহমুদ নিয়াজ চন্দ্রদ্বীপ আপনারা নাকি ছিলেন। আর কে কে ছিলেন জানিনা। দেন, আপডেট দেন, কি করলেন এই ৯ মাসে? নাকি সংগঠন আপনাদের কোনো টাইম ফ্রেম বেধে দেয় নাই কতদিনের মধ্যে কি করবেন? কোনো মিটিং মিনিটস নাই, কার সভাপতিত্বে হইল কমিটি, কে কমিটির আহ্বায়ক? কে কাকে ফলোআপ করবেন? আচ্ছা মেনে নিলাম একটা ইমারজেন্সি পরিস্থিতিতে তখন গিল্ড আর ইকুইটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক-এর অনুপস্থিতিতে কমিটি করেছেন, পরবর্তীতে তো ওই কমিটির একটা স্ট্রাকচার দাড় করাইতে হবে। না কী সাংগঠনিক এই বিষয়গুলো আমি একটা অসুস্থ মানুষ আপনাদেরকে বলে দিবো?
এখন যদি কমিটিকে খুঁজতে যান সেই কমিটিই তো খুঁজে পাবেন না। কে কার কাছে জবাবদিহি করবে। আর ঐ দিন হাউজ মালিককে রাহাত ফোন করে সংগঠনে নিয়ে আসেন। এরপর আপনাদের সাথে বসিয়ে দেওয়া হয় কথা বলার জন্য। ওই লোকের সামনেই তো কমিটি হইল। এরপর থেকে দেখা হলেই অভিযোগ করেন আমার পরিবার যোগাযোগ করে নাই দেখে আপনারা কিছু করেন নাই। কি হাস্যকর। এই কথা বলে কোন দায় এড়াতে চান বুঝিনা। আমার পরিবার আপনাদের ফলোআপ করবে না ভাইয়া, গিল্ড আর ইকুইটির এক্সেকিউটিভ বডি ফলোআপ করবে। এটাই তো সাংগঠনিক নিয়ম!
গত ৯ মাস ধরে প্রতি মাসে ৩০/৪০ হাজার টাকা যেখানে আমার চিকিৎসা খরচ, যেই ভয়ংকর মানসিক দুর্যোগ এর মধ্যে দিয়ে আমার পুরো পরিবার এক একটা দিন পার করছে, যেই ট্রমার মধ্যে দিয়ে আমি আর রাহাত সব সামলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি কীভাবে আশা করেন এতো বড় একটা দুর্ঘটনার পর খুব ক্ষতিপূরণ চাই বলে বার বার আপনাদের কাছে যাবো?
গণমাধ্যমের দিকে ইঙ্গিত করে আঁখি বলেন, আমি কোনো বিচার চাইনা। আমার অবস্থান আমি পরিষ্কার করলাম আবারো। গণমাধ্যমের অবস্থান ক্লিয়ার এক্সিডেন্টের দিন থেকে। তারা ভিউ চায়, ক্লিক বিট চায়, তারা চাইলে কলমের খোঁচায় দফা রফা করে ফেলতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা করে নাই। তাই তাদের কাছে কোনো প্রত্যাশা নাই। সহকর্মীদের অবস্থান ক্লিয়ার, সহমর্মিতা দেখাবে, কিন্তু প্রতিবাদ করবে না। আমার চামড়ার দাম তো কম, চামড়ার বাজার মূল্য প্রতি প্রজেক্ট ৭০/৮০ হাজার হইলে দৃশ্যপটই ভিন্ন হইত। কিন্তু অভিনয় শিল্পী সংঘের আসলে অবস্থানটা কি আমি ক্লিয়ার না। কীসের ভয় নিজ উদ্যোগে হাউজ মালিককে ডেকে তার গাফিলাতির জন্য ক্ষমা চাওয়ানো। চাওয়া তো এইটুকুই। এতোটুকু করতে পারছেন না। এটা করতে কমিটি লাগে? জুজুর ভয়টা কোথায়?
উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি মিরপুরের একটি শুটিং বাড়ির মেকআপ রুমে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন শারমিন আঁখি। সেদিনই তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। বিস্ফোরণে আঁখির হাত, পা, চুলসহ শরীরের ৩৫ ভাগ পুড়ে যায়। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে প্লাজমা দিতে হয়। দীর্ঘ দুই মাস চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় ফেরেন। তবে বাসায় ফিরলেও তিনি এখনও কাজে ফেরেননি।