ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) হত্যার ঘটনার পর সময় যত বাড়ছে প্রকাশ্যে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে মামলার জট। গ্রেফতাররা প্রতিদিন স্বীকার করছেন নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তেও অনেকদূর এগিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। প্রতিদিনই নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। গোয়েন্দা তথ্যমতে, পুরো কিলিং মিশনে সবার সামনে ছিলেন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। হত্যার পর তার হাত-পাসহ শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ টুকরো টুকরো করে আলাদা করে হত্যাকারীরা।
আমানুল্লাহ আমানকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ওই ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যার পর উল্লাসে মেতে উঠেছিল খুনিরা। মূলত এমপিকে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলে সঞ্জীবা গার্ডেনের আবাসিকের একটি ফ্ল্যাটে নেওয়ার পর ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করে অচেতন করা হয়। পরে বালিশচাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে মদ ও হেরোইনের আসর বসায় তারা।
জিজ্ঞাসাবাদে আমানুল্লাহ আমান জানিয়েছেন, মরদেহের পাশে বসেই মদ ও হেরোইন সেবন করে উন্মত্ততায় মেতে ওঠে তারা। এরপর এমপির মরদেহের মাংস ও হাড় আলাদা করা হয়। মাংস ‘কিমা’ বানিয়ে ফ্ল্যাশ করা হয় টয়লেটের কমোডে। আর হাড় ও মাথার খুলি নেওয়া হয় বাইরে। সেগুলো ফেলা হয়েছে নিউটাউন এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বের হাতিশালার বর্জ্য খালে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, এমপি আনোয়ারুলকে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা শুনে তারা নিজেরাই আঁতকে উঠেন। তার পুলিশি ক্যারিয়ারে অনেক খুনের ঘটনার বর্ণনা শুনেছেন, কিন্তু এত নৃশংস বর্ণনা কখনই শোনেননি।
সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার ভাষ্য, সিলিস্তি রহমান নামের নারীর সঙ্গে এমপির নগ্ন ছবি তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু অতিমাত্রায় ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করায় গভীরঘুমে অচেতন হয়ে পড়েন আনোয়ারুল। এতে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে বালিশচাপা দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এরপর প্রথমে আনোয়ারুলের মরদেহ গুমের জন্য হাড়-মাংস আলাদা করা হয়। হাড়-মাংস ট্রলি ব্যাগের মাধ্যমে বাইরে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মাংসগুলো ‘কিমা’ করে টয়লেটের কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ করা হয়। হাড় ও মাথার খুলি ট্রলিব্যাগে নিয়ে প্রথমে একটি শপিংমলের সামনে যায় সিয়াম ওরফে কসাই জিহাদ। সেখান থেকে হাতিশালার বর্জ্য খালে মরদেহ ফেলে দেওয়া হয়।
আনোয়ারুল আজীমকে নিয়ে দুটি সিসি ক্যামেরার দুইটি ফুটেজ প্রকাশ হয়েছে। একটি আনোয়ারুল সঞ্জিবা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে প্রবেশের ফুটেজ, আরেকটি ট্রলিতে করে তার খণ্ডিত মরদেহ নিয়ে যাওয়ার। একটি ফুটেজে দেখা যায়, ১৩ মে ভারতীয় সময় দুপুর ২টা ৫৩ মিনিটের দিকে আনোয়ারুলের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করছে আমানুল্লাহ আমান ও ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া। হত্যাকাণ্ডের পর ফয়সাল বাংলাদেশে এলেও এখনো পলাতক। তাকে গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে ডিবি।
৫৮ সেকেন্ডের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১৪ মে ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা ১১ মিনিটে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ও সিয়াম ওরফে কসাই জিহাদ একটি পেস্ট কালারের ট্রলিব্যাগ এবং তিন থেকে চারটি পলিথিন ব্যাগে আনারের মরদেহ নিয়ে লিফটে উঠছে। ডিবির কাছে এ তথ্য স্বীকার করেছে গ্রেফতার আমানুল্লাহ। ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতার কসাই জিহাদ।
হত্যার পর কীভাবে তার মরদেহ টুকরা টুকরা করে ফেলে দেওয়া হয়, তার বর্ণনা দিয়েছেন কলকাতায় গ্রেফতার কসাই জিহাদও। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি জানিয়েছে, এমপি আনারকে হত্যার পর তার মরদেহ ৮০টি টুকরো করেন কসাই জিহাদ। এরপর সেই অংশগুলো ফেলা হয় কলকাতার উপকণ্ঠে অবস্থিত ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলাখালির বিভিন্ন স্থানে। সিআইডির আশঙ্কা, এরই মধ্যে হয়তো আনরের দেহের খণ্ডিত অংশ জলজ প্রাণীদের পেটে চলে গেছে।
উপদেষ্টা সম্পাদক: এএসএম মাঈন উদ্দিন পিন্টু
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ তাওহীদুল হক চৌধুরী
ফোন: ০১৭৯১-২৬৭৭২৪, বার্তা বিভাগ: ০১৮৪৮-৩৩০৬৭৮
ই-মেইল : mail.muktokolom24@gmail.com
Copyright © 2024 মুক্ত কলম নিউজ. All rights reserved.