![](https://i0.wp.com/muktokolom.news/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png?w=696&ssl=1)
আজ ১৩ নভেম্বর হাতিয়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে সাধারণ জনগণ।
এই দিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে হাতিয়া ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের ৬৯৭ জন মানুষকে রাজাকারদের সহায়তায় গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী। নির্মম এ হত্যাযজ্ঞে সেদিন রেহাই পায়নি মায়ের কোলে থাকা শিশু সন্তানও। সেদিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ২৩ রমজান শনিবার।
ওইদিন রাতে অনন্তপুর গ্রামে মুক্তি বাহীনিরা অবস্থান করেছেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানি বাহীনি ও তার দোসররা সেখানে স্বশস্ত্র অবস্থান নেয়। নিশির শেষ রোজাদার মানুষ সেহরী খেয়ে কেউ ঘুমিয়েছে, কেউ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউবা পবিত্র ফজরের নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঠিক সেই সময় হঠাৎ করে চারদিক থেকে শুরু হয় বৃষ্টির মত গুলি আর মর্টার শেলের গোলাবর্ষণ। রোজাদার ও ঘুমন্ত মানুষজন জেগে উঠে দিগ বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। বাগুয়া অনন্তপুর, রামখানা, নয়াদাড়া, মন্ডলের হাট, নীলকণ্ঠ, দাগার কুটি গ্রামসহ আরও অন্য গ্রামের মানুষ কিছু বুঝে উঠার আগেই পাকিস্তানি বাহীনি ও তাদের এদেশী দোসর, রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস বাহীনি মিলে গ্রামের ঘর-বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয়। সেই সাথে তারা চালাতে থাকে লুটপাট ও নির্যাতন। মুহুর্তেই গ্রাম গুলো পরিণত হয় ধ্বংস স্তুপে।
এমন পরিস্থিতিতে এলাকার নিরীহ মানুষজন জীবন বাচাঁনোর তাগিদে ধান ক্ষেত, ঝোপঝাড়ে পালিয়েও জীবন বাচাঁনোর চেষ্টায় ব্যর্থ হন। এমনকি জীবন বাচাঁতে ঝাঁপ দেন ব্রহ্মপুত্র নদে। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। নিরুপায় বৃদ্ধ ও শিশুদের আর্ত চিৎকারে হাতিয়ার আকাশ-বাতাশ ভারী উঠে।
পাকিস্তানি বাহীনি এ দেশীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় এলাকার নারী-পুরুষদের ধরে এনে দাগার কুটিতে সারিবদ্ধ ভাবে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত মরদেহগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পরদিন এলাকাবাসী ৬শ’ ৯৭জন নিরীহ গ্রামবাসীর ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ সংগ্রহ করে গণকবর দেয়। গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভটি ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানান্তরিত দাগার কুটি বধ্য ভূমি স্মৃতি সৌধটি এখন দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে দাড়িয়ে আছে হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে। পরে শহীদদের স্মরণে নতুন অনন্তপুর বাজারের পশ্চিম পাশে নতুন করে নির্মাণ করা হয় আরও একটি স্মৃতিস্তম্ভ। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের জঘন্যতম এ হত্যাকান্ডের ইতিহাস জাতীয় পর্যায়ে তেমন গুরুত্ব না পেলেও তা উলিপুরের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে, সকালে হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে হাতিয়া গণহত্যা দিবস পালন কমিটি‘র উদ্যোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এমএ মতিন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মর্তুজা, হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শায়খুল ইসলাম নয়া প্রমুখ।