হঠাৎ সামরিক আইন জারি করে বিপাকে পড়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে সরাতে দ্বিতীয় দফার অভিশংসন প্রস্তাবে সায় দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট। শনিবার বিরোধীদলের নেতৃত্বাধীন পার্লামেন্টে আনা দ্বিতীয় দফা অভিশংসন প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়, এতে ২০৪ জন সদস্য অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। খবর বিবিসির।
দেশটির আইনপ্রণেতারা শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ইউন সুক-ইওলের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক আইন প্রয়োগের চেষ্টার অভিযোগে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন। এর পরই পার্লামেন্টের স্পিকার উ উন-সিক অভিশংসনের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। তবে এখনই তিনি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অপসারিত হবেন না। বিরোধী দল একে ‘জনগণের বিজয়’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
দেশটির পার্লামেন্টের ৩০০ আইনপ্রণেতার মধ্যে ২০৪ জন অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন এবং ৮৫ জন বিপক্ষে। তিনজন ভোটদানে বিরত ছিলেন এবং আটটি ভোট বাতিল করা হয়। অভিশংসনের ফলে ইউন তার দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত এখন এই ভোট নিয়ে পর্যালোচনা করবে। এটি দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের প্রস্তাবের ওপর ভোট সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হন ডাক-সু দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই নিয়ে আদালতের হাতে রয়েছে ১৮০ দিন, এই সময়ে তারা ইউনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। অভিশংসনের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০০ ভোট। ফলে, বিরোধী আইনপ্রণেতাদের ইউনের রক্ষণশীল পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) অন্তত আট এমপিকে তাদের পক্ষে আনতে হয়েছে।
অভিশংসনের সঙ্গে সঙ্গে পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভকারীরা আনন্দে মেতে ওঠেন। কে-পপ গ্রুপ গার্লস জেনারেশনের জনপ্রিয় গান ‘ইনটু দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড’ আবারও পার্লামেন্টের বাইরে বাজানো হচ্ছে। আনন্দ যেন ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। তারা গানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাইছে আর আতশবাজি ফাটাচ্ছেন। এর আগেও এই গানটি এখানে বাজানো হয়েছিল অভিশংসন ভোটের আগে।
এর আগে, গত ৩ ডিসেম্বর সামরিক শাসন আরোপ করে তুমুল প্রতিরোধের মুখে পড়েন ইউন। বিরোধী এমপি ও জনরোষের মুখে ঘোষণার মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যেই তা বাতিল করেন তিনি। এরপর থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ায় সাংবিধানিক সংকট দেখা দেয়। আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগে ইউনের পদত্যাগের দাবি জোরদার হয়।
এরপরই বিরোধী দলগুলো নতুন করে অভিশংসনের ভোট শুরু করেন। এই ভোটের আগে দেশের রাজপথে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। ইউনের রক্ষণশীল পিপিপি এক সপ্তাহ আগে প্রথম অভিশংসন ভোট বর্জন করেছিল। ফলে কোরাম পূরণ হয়নি।
শনিবারও ভোটের আগে পিপিপি আইনপ্রণেতারা বৈঠক করে তাদের অভিশংসনের বিরোধিতার অবস্থান নিশ্চিত করেন। যদিও এবার দলীয় সদস্যদের ভোটে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। পিপিপি নেতা হান ডং-হুন দলের সদস্যদের এবার অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি শনিবার বলেছে, ইউনের ‘পাগলামি’ আর সহ্য করা সম্ভব নয়। এক বিবৃতিতে দলটি বলেছে, অভিশংসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার মানে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।