একটি ফেসবুক কমেন্টকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদের পক্ষে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় জড়িতদের বিচার চায় তারা।
সোমবার(৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন নোবিপ্রবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, আইন বিভাগের সকল ব্যাচ আমরা একসাথে দাঁড়িয়েছি আমাদের বন্ধু আমাদের ভাই ফয়েজ আহমেদের জন্য। আপনারা অবগত আছেন, ফয়েজ আহমেদ কে খুব ছোট একটা অপরাধের ধোয়া তুলে তার পুরো ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে, ফয়েজ যে ইস্যুতে অভিযুক্ত, সে কারণে সে কখনোই আইনগতভাবে অপরাধী হতে পারেনা। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২০ সালের ১৪ই অক্টোবর। পাবলিকিয়ান সংসদ নামে একটি গ্রুপ ছিল যে গ্রুপে ফয়েজ আহমেদ নিজেও যুক্ত ছিল না সেখানে প্রেসক্লাবের একজন সাংবাদিক শাহরিয়ার নাসের তিনি যুক্ত ছিলেন। নোবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধুর যে ম্যুরাল আছে এই ছবিটা ইডিট করে সেখানে ভিপি নূরের ছবি অ্যাড করে তাকে ছাগল আখ্যায়িত করে তার ব্যক্তিগত একাউন্টে একটি পোস্ট শেয়ার করে। সেখানে যে পোস্ট করেছিল তার নাম মমিন আসিফ। অর্থাৎ মমিন আসিফ মুল পোস্ট টি করেছিল। সেই ছবিটিতে ক্যাপশনে লেখা ছিল এই ছবিটি কি আসলে এডিট করা? অর্থাৎ মমিন আলী নিজেও জানে না ছবিটি এডিট করা কিনা। তিনি জানতে চেয়েছেন। কিন্তু মোমেনকে সেটা এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি। এটাই শেয়ার করে শাহরিয়ার নাসের লিখেন ছাগলদের কতবড় দুঃসাহস। ফয়েজ আহমেদ এখানে কমেন্ট করেন এখানে তো দোষ আছে কিছু দেখছি না। ৬ শব্দের এই কমেন্টের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
তিনি আরোও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে নোটিশ দেয়। সেখানে লেখা ছিল বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননা করার জন্য সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে এবং তাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা ৫ কার্য দিবসের মধ্যে জানাতে হবে। ১৪ তারিখের নোটিশ দেওয়ার পর ১৫ তারিখ কে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ দিন সময় দিলেও তার অধিকার হরণ করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ফয়েজ আহমেদকে তারপর থেকে ক্লাস কন্টিনিউ করতে দেয়া হয় নাই। তিন মাসের অধিক সে কারাগারে ছিল। ভয়েজ খেয়ে বা তার পক্ষ থেকে তার পরিবারকে তার নোটিশ দর্শানোর সুযোগ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারপরের ইতিহাস আরো করুন। ফয়েজ বারবার তার ব্যাপারটি একাডেমী কাউন্সিলর তোলার চেষ্টা করেও তুলতে পারেনি। এটার কারণ কি ছিল আমরা জানি না আমরা এটা জানতে চাই। সাময়িক পরিষ্কার দিয়েছে চার বছর পার হয়ে যেতে পারে এ বিশ্ববিদ্যালয় না পড়লে জানতাম না। আমাদের দাবি এর সাথে যারা জড়িত প্রত্যেকের আইনের আওতায়ন এনে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার করা হোক।”
আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আফজাল হোসাইন সরন বলেন,” ফয়েজ ভাই আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ভাইয়ের ঘটনা আমাদের সামনে এসেছে। এটি এখন শুধু নোবিপ্রবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা এখন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ছাত্র জনতা এর বিচার চাই। ফয়েজ ভাই আমার সিনিয়র হলেও আমি তার সাথে পরিচিত হতে পারি নাই, একসাথে এককাপ চা খেতে পারি নাই। এর দায়ভার কার? লেজুড়বৃত্তিক প্রশাসন, তার দালাল ও দোসররা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য একজন নির্দশ ছাত্রকে বলি দিতে দ্বিধাবোধ করেনি। যারা যারা ফয়েজ আহমেদ কে মাধ্যম বানিয়ে বড় বড় পদ বানিয়ে নিয়েছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
আইন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মুবদি রাফিন বলেন,”সবাই যখন পরীক্ষা দিতো আমি তখন অফিস রুমে দাড়িয়ে কাদতাম।” একবার ভেবে দেখেন কথাটা কত মর্মান্তিক! ফয়েজ ভাইয়ের সাথে আমাদের ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় হয়নি। তার সহপাঠী বড় ভাইদের চিনলেও তাকে চিনি না। কিন্তু আজকে মানবিকতার জায়গা থেকে এখানে এসে দাড়িয়েছি। আমরা চাই এ রোকম আর কারো সাথেই না হোক।সেটা ওনার সাথে যা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ইনজাস্টিস। আমরা চাই এ অন্যায়ের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক