রাজশাহীতে বরই খেয়ে অসুস্থ হয়ে দুই দিনের ব্যবধানে দুই সহোদর শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ধারণা করা হলেও চিকিৎসকরা অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন। সহোদর দুই বোনের মৃত্যুর পর তাদের বাবা-মাকেও হাসপাতালের নিপাহ ওয়ার্ডে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এছাড়া দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ জানতে নমুনা পাঠানো হয়েছে ঢাকায়।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ নম্বর আইসোলেশন ওয়ার্ডে ওই দুই শিশুর বাবা ও মাকে চিকিৎসাধীন থাকতে দেখা গেছে।
মুনতাহা মারিশা (২) ও মুফতাউল মাশিয়া (৫) নামের ওই দুই শিশু রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের মনজুর রহমানের মেয়ে। মনজুর রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রীর নাম পলি খাতুন। পরিবারের সবাই রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে বসবাস করতেন।
চিকিৎসকরা জানান, কুড়িয়ে পাওয়া বরই না ধুয়ে খেয়েছিল ভুক্তভোগী দুই শিশু। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মারা যায় মনজুরের বড় মেয়ে মাশিয়া। এর আগে গত বুধবার একই লক্ষণ নিয়ে মারা যায় ছোট মেয়ে মারিশা। পরে শিশুদের বাবা-মা মনজুর ও পলিকে হাসপাতালের নিপাহ আইসোলেশনে নেওয়া হয়।
এদিকে, দ্বিতীয় মেয়ে মারা যাবার পর তাদের আইসোলেশনে রাখার কারণে মেয়ের জানাজাতেও যেতে পারেননি তারা। শনিবার বিকেলে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় মরদেহ।
মনজুর রহমান বলেন, গত মঙ্গলবার কোয়ার্টারের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। পরদিন বুধবার মারিশার জ্বর ও বমি হয়। এরপর তাকে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে শুক্রবার মাশিয়ার জ্বর আসলে রাজশাহী সিএমএইচে আনলে তার পুরো শরীরে ছোট কালচে দাগ উঠতে থাকে। এরপর চিকিৎসকরা তাকে রামেক হাসপাতালে পাঠান। শুক্রবার রাতে রামেক হাসপাতালে আনলে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।
রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধারণা, দুই শিশুই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তবে অন্য কোনো ভাইরাসও হতে পারে। এ ঘটনায় পুরো পরিবারের সবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার প্রতিবেদন আসলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, টেস্টের রিপোর্ট হাতে আসলে শিশু দুটির মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। তবে তাদের বাবা-মায়ের শারীরিক অবস্থা ভালো। কিন্তু দুই সন্তান হারিয়ে তারা মানসিকভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন।