ঢাকা | রবিবার | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ
ফিচারমানুষের সেরা বন্ধু ছিল শিয়াল: গবেষণা

মানুষের সেরা বন্ধু ছিল শিয়াল: গবেষণা

spot_img

মানুষ ও কুকুরের সম্পর্ক অনেক পুরোনো, ধারণা করা হচ্ছে সেটা ১০ হাজার বছরের মতো। তবে এক হাজার ৫০০ বছর আগের পাতাগোনিয়ার এক সমাধিস্থলে নতুন এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এক আশ্চর্য তথ্য।

উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনার প্রাচীন এক সমাধিতে এক ব্যক্তির কঙ্কালের সঙ্গে পাওয়া গেছে অন্য একটি প্রাণীর কঙ্কাল। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পোষা প্রাণী। তবে মানুষের ওই বন্ধুটি মোটেই কুকুর নয় বরং শিয়াল, আরও পরিষ্কারভাবে বললে খেঁকশিয়াল।

শিকার ও ফল-মূল খেয়ে জীবন ধারণ করা দক্ষিণ আমেরিকার এক গোত্রের মানুষদের সঙ্গে ডুসিসিয়ন এভাস নামের বিলুপ্ত বড় আকারের এক ধরনের খেঁক শিয়ালদের চমৎকার ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্কিওলজির অধীনে একটি সংস্থার সঙ্গে কাজ করা গবেষক ড. ওফেলি লেবরাসেয়ার জানান, উত্তর পাতাগোনিয়ার কানাদা সেকা নামের জায়গায় মানুষের কঙ্কালের সঙ্গে ওই শিয়ালটির কঙ্কাল প্রত্নতাত্ত্বিকেরা আবিষ্কার করেন ১৯৯১ সালে। শিয়ালের শরীরের কোনো কাটার চিহ্ন নেই। অর্থাৎ একে খাওয়া হয়নি।

প্রাচীন ডিএনএ এবং রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের একটি গভীর বিশ্লেষণ শিয়ালের প্রজাতি এবং বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। শেয়ালের দেহাবশেষের কোলাজেন নামের প্রোটিন পরীক্ষা করে জানা গেছে যে, ওই সময় মানুষ যে খাবার খেয়েছিল এটিও একই খাবার খেয়েছিল।

রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স নামের জার্নালে গত বুধবার বিজ্ঞানীরা এসব তথ্য প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

আবিষ্কারটি অন্যান্য মহাদেশে সমাধিস্থলে পাওয়া তথ্য-প্রমাণ যোগ করে যে ইঙ্গিত দেয় তা হলো শিয়ালকে পোষ মানিয়েছিল মানুষ এবং এই দুটি প্রাণীর মধ্যে চমৎকার একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।

এখন থেকে ২৬ লাখ বছর আগে থেকে শুরু করে ১১ হাজার ৭০০ বছর আগে পর্যন্ত ডি. এভাসদের বাস ছিল পৃথিবীতে। এরা অনেকটা এখনকার জার্মান শেফার্ডের আকারের ছিল। তবে এতটা স্বাস্থ্যবান ছিল না, ওজনে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি পর্যন্ত হতো।

আর্জেন্টিনার ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের গবেষক ড. সিনথিয়া অ্যাবানের সঙ্গে গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া লেবরাসেয়া সিএনএনকে জানান, বিজ্ঞানীরা শিয়ালের কঙ্কাল পরীক্ষা করে দেখেন যে, এদের খাবারে প্রত্যাশার চেয়ে কম মাংস ছিল এবং মানুষের খাদ্যের সঙ্গে বেশি মিল ছিল।

তিনি জানান, এটা দেখে অনুমান করা যায়, হয় ওই সময়কার মানুষেরা এদের খাওয়াত কিংবা এটি তাদের ফেলে দেওয়া খাবার খেত। সবকিছু মিলিয়ে মনে হয় মানুষের ওই সমাজের সঙ্গে এই প্রাণীদের ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক ছিল।

দক্ষিণ আমেরিকায় পোষা প্রাণী হিসাবে শিয়ালদের আবিষ্কারের বিষয়টি ইউরোপ এবং এশিয়ায় আবিষ্কার করা শিয়ালের সমাধিগুলোর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে জানান অরোরা গ্রানদাল-ডি’অ্যাংলাদে। স্পেনের কোরুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞানী গবেষণাটির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও আইবেরিয়ান উপদ্বীপের ব্রোঞ্জ যুগের এক সমাধি নিয়ে কাজ করেন। যেখানে মানুষের সঙ্গে দশটি কুকুর ও চারটি শিয়ালের কঙ্কাল পাওয়া যায়। গবেষকেরা তখনো অনুমান করেন শিয়ালেরাও কুকুরের মতো মানুষের সঙ্গী ছিল।

‘শিয়ালদের পোষা প্রাণী হতে কোনো বাধা নেই,’ গ্রানদাল-ডি’অ্যাংলাদে সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা জানি, ভিন্ন ভিন্ন সমাজ ব্যবস্থার মানুষেরা প্রায়ই পোষা প্রাণী রাখত। কেবল সঙ্গী হিসেবেই রাখা হতো এগুলোকে। আর এটা বিবেচনায় এনে এখন একের পর এক জায়গার খোঁজ মিলছে যেখানে শিয়ালেরা মানুষের পোষা প্রাণী হিসেবে কাজ করত বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

spot_img

সম্পর্কিত আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ খবর