ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি গত ১৯ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন। আজ ২৩ মে রাইসিকে তার নিজ জন্মভূমি মাশহাদে দাফন করা হবে।
ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পর তার পরিবারকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে তার স্ত্রীকে নিয়ে আগ্রহটা বেশি। ধার্মিক হিসেবে পরিচিত রাইসির স্ত্রী কেমন মানুষ— তা নিয়ে কৌতুহলী অনেকে।
রাইসির স্ত্রীর নাম জামিলেহ আলমোলহোদা—
তিনি একবার বলেছিলেন ‘নারীদের বাইরে কাজ করা ও পড়ালেখা করতে চাওয়া এক ধরনের সহিংসতা।’
সদ্যই প্রয়াত হওয়া প্রেসিডেন্ট রাইসির স্ত্রীর জন্ম হয়েছিল ১৯৬৫ সালে ইরানের দ্বিতীয় জনবহুল শহর মাশহাদে। তিনি দর্শন শিক্ষার ওপর শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৮ বছর বয়সে তিনি ইব্রাহিম রাইসিকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে দুটি মেয়ে আছে।
২০০১ সালে তিনি শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিডারশিপ অ্যান্ড এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ফ্যাকাল্টির সদস্য হন।
নারীদের বাইরে কাজ করার ক্ষেত্রে কট্টোর বিরোধী রাইসির স্ত্রী জামিলেহ আলমোলহোদা। ২০২৩ সালের জুনে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তেলেসুরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামিলেহ বলেছিলেন, স্বাধীনতার নামে বিভিন্ন দেশের সরকার নারীদের যৌন হয়রানি করে।
তিনি টিভি চ্যানেলটিকে আরও বলেছিলেন, নারী অধিকার সংস্থাগুলো নারীদের ঘরে অত্যাচারের শিকার হওয়া নিয়ে কথা বলে। কিন্তু পরিবারের বাইরে নারীরা যে সহিসংতার শিকার হয় সেগুলো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “আমরা চাই নারীরা নারীই থাকুক। কেন আমরা পুরুষদের মতো হব। কেন আমাদের পড়ালেখা করতে হবে? পুরুষদের মতো কাজ ও জীবনযাপন করতে হবে? এটি এক ধরনের সহিংসতা।”
এছাড়া নারীদের হিজাব পরার পক্ষে সবসময় অবস্থান নিয়েছেন তিনি। ২০২৩ সালে ইরানে হিজাব আইন আরও কঠোর করা হয়। ওই সময় আইন করা হয়, নারীরা হিজাব না পরলে আরও বেশি দিন কারাদণ্ড এবং জরিমানা করা হবে।
তখন এটির পক্ষে প্রেসিডেন্ট রাইসির স্ত্রী বলেন, “সব জায়গায় ড্রেস কোড আছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুলেও আছে। সব জায়গায় আছে।”
তিনি আরও বলেন, “আপনাদের সবাইকে আমি বলতে চাই হিজাব হলো একটি ঐতিহ্য। ধর্মীয়ভাবে বাধ্যতামূলক একটি ঐতিহ্য, যা অনেকে মানেন। গত কয়েক বছর ধরে হিজাব পরা আইনে পরিণত হয়েছে। আর আইন ভঙ্গ করা— যে কোনো আইনের মতো, অন্য যে কোনো দেশের মতো— শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ তাকে এক সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করেছিল, যারা হিজাব পরতে চায় না তাদের ব্যাপারে কি বলবেন। উত্তরে তিনি বলেন, “এটি অসম্মান”
২০২৩ সালের নভেম্বরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর স্ত্রী ব্রিগেট ম্যাক্রোঁকে একটি চিঠি লিখেছিলেন রাইসির স্ত্রী।
এতে তিনি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য তার স্বামীকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, “প্রিয় মিস ম্যাক্রোঁ! দয়া করে, ফ্রান্সের নারী, মা ও মেয়েদের প্রতিনিধি হিসেবে, আপনি আপনার স্বামীকে বলুন তিনি যেন নিরীহ নারী ও শিশু ফিলিস্তিনিদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত না হন। আপনার মানবিক কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তা মঙ্গল করুক।”